১.বিশ্বের সকল দেশের রাজনীতিই কমবেশী হানাহানিমূলক,প্রতিহিংসা পরায়ন।খুব কম দেশই পাওয়া যাবে যেখানে সরকার কর্তৃত্বপরায়ন হয় না ,বিরোধীদের কট্টর হাতে দমন করে না। বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তাই বলে বিরোধীরা রাস্তা গাড়ি ভাংচুর করবে , আগুন দিবে, পেট্রাল বোমা মেরে মানুষদের পুড়িয়ে ফেলবে,মেরে ফেলবে, রেল লাইনসহ রাষ্ট্রীয়সম্পদ ধ্বংস করবে,গুপ্তহামলা করে সাধারন মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সরকারকে বাধ্য করার বিরোধীদের এমন অপকৌশল ও খুব কম দেশে দেখা যায়। সরকার যেহেতু বিরোধীদের রাস্তা নামতে দিতে রাজি না তাহলে তারা কি এমন কৌশল বের করতে পারে না ? যে কৌশলে মানুষের ক্ষতি হবে না , গাড়ি ভাংচুর হবে না , কেউ পুড়িয়ে মরবে না ,অর্থনৈতিক কার্যক্রম অচল হবে না? তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সভা করে ,বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে গনসংযোগ করে সেমিনার করে তাদের বক্তব্য বিবৃতি তুলে ধরে তাদের সমর্থন আদায় করতে পারে। তাহলেই এদেশের রাজনৈতিক উত্তরন ঘটবে পাশাপাশি অর্থনৈতিক উত্তরন বজায় থাকবে।
২. প্রায় সতের কোটি মানুষের এদেশে যে সব উপাদান অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে,গতিশীল রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, নারী শ্রমিকের কল্যানে গড়ে উঠা রেডিমেইড গার্মেন্টস্ ব্যবসা।আর এই দুই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা আবাসন সেক্টর সর্ম্পকিত ইট বালু সিমেন্ট রডের ব্যবসা ও জমজমাট। যদি রেমিটেন্স ও রেডিমেইড গার্মেন্টস্ েপচন ধরে তথা বিদেশে লোক যাওয়া কমে যায় ও রেমিটেন্স আসা কমে যায় এবং গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ীরা বিদেশী অর্ডার না পায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে স্থায়ী মন্দার সৃষ্টি হবে তা থেকে উত্তরনে অনেক বছর লেগে যাবে। তখন আমরা তথা আমাদের বাংলাদেশ উন্নয়নের গতি ধারা থেকে পিছিয়ে পড়বে। তাই সকল রাজনৈতিক দলকে কূটনীতিগত এবং পলিসিগত সহায়তা দিয়ে এই দুই সেক্টরকে সচল রাখতে হবে।
৩.আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো রাজনৈতিক কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। রাজনীতি অর্থনীতিকে বারংবার প্রভাবিত করে। এ দেশ স্বাধীন হয়েছে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা কিন্তু উন্নত হচ্ছে সাধারন মানুয়ের কর্মপ্রচেষ্টা। এ দেশের জনসংখ্যা বেশী তা কিন্তু সমস্যা নয় বরং সম্পদ কারণ তাদের কারনেই রেমিটেন্স আসে,সস্তা শ্রম পাওয়া যায় গার্মেন্টস্,েনির্মান শিল্পে সহজে শ্রমিক পাওয়া যায়, কৃষি পন্য উৎপাদনে কম দামে লেবার পাওয়া যায়, সহজে মৎস্য উৎপাদন করা যায়, কম দামে বিভিন্ন কোম্পানীতে লোক নেওয়া যায়,ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড জমজমাট সহজে লোক পাওয়া যাওয়ার কারনেই। এরাই আমাদের অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী করতেছে,দেশের আয় বৃদ্ধিতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতেছে। আর রাজনীতির বিষ যদি ঝোঁকের মত এই অর্থনীতিকে শুষে না খেত তাহলে আমাদের অর্থনীতি দক্ষিন কোরিয়ার চেয়ে বড় হতো।
৪.ছাত্র সংগঠনের নেতারাই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বদান কারী,তাদের নেতৃত্ব শিখতে হবে এজন্য ছাত্র সংগঠন টিকিয়ে রাখার পক্ষে সকল রাজনৈতিক দল। কিন্তু কৌশলে ছাত্ররাজনীতি ব্যবহার করে তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ জেলা উপজেলাগুলোতে হয় ছাত্রত্বশেষ এবং না হয় অর্থ ও পেশিশক্তি রয়েছে এমন অছাত্ররাই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাছিনাকে ধন্যবাদ তিনি তার দলের ছাত্রসংঠনের বয়স সীমা ঊনত্রিশে বেঁধে দিয়েছেন।কিন্তু অন্যদল গুলো তা ও পারেনি।অথচ ক্ষমতা যাওয়ার জন্য ক্ষমতা টিকে থাকার জন্য রাজপথ দখলে রাখার,সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হল ছাত্ররাজনীতি। ছাত্ররাজনীতি প্রশ্নে যদি জরিপ চালানো হয় কিংবা গনভোটের আয়োজন করা হয় তাহলে ফলাফল কি আসবে জানি না তবে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের পড়াশুনাসহ ব্যক্তিগত পারিবারিক ক্ষতির পাশাপাি দেশের অর্থনীতিকে যে ক্ষতিগ্রস্থ করে এই বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত হবে। এই কারনেই দেশের নীতিনির্ধারকগন তাদের ছেলেমেয়ে দের ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়াতে দেন না বিদেশে পড়াশুনা করান। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ছাত্রসংগঠনের ব্যাপারে আরো সংবেদনশীল হয়ে সঠিক মেধাবীর হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। কারন মেধাবী নেতৃত্ব কখনো জ্বালাও পোড়াও বিশ্বাস করে না এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধাঁ সৃষ্টি করবে না।
৫. এক সময় এ দেশে শিক্ষার হার কম ছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে তাই শিক্ষিত লোক পাওয়া যেত না। অর্থশক্তি ও পেশিশক্তি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের দ্বারাই এদেশের স্থানীয় সরকারসহ তৃনমূলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু সময় বদলে গেছে প্রত্যেকের হাতে হাতে যেমন মোবাইল ফোন রয়েছে তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাছিনার নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ফলে এদেশের প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।তাই সময় এসেছে রাজনৈতিক নেতৃত্বে শিক্ষার ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা নেওয়ার। যদি এদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তথা চেয়ারম্যান মেম্বার ইলেকশনে মিনিমাম ইন্টারমেডিয়েট পাস অথবা ডিগ্রিপাশ নির্ধারন করে দেওয়া হয় তাহলে তৃনমূলের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে, কথাবার্তা আচার আচরনে সহনশীলতা বাড়বে,রাজনৈতিক হানাহানি কমবে, গ্রাম্য অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
৬.বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে সাধারন মানুষ রাজনৈতিক হানা হানি চায় না, ব্যবসায়ীরা চায় ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের পরিধি আরো বাড়াতে,পেশাজীবিরা চায় পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে, গৃহিনীরা চায় নিরাপদে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে,প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিরা চায় প্রতিষ্ঠান সচল থাকুক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড আরো বাড়–ক।কিন্তু রাজনীতিকরা এসব বুঝেও এড়িয়ে যায় । অথচ তারা রাজনীতি করে এদের জন্যই।আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী হয় তাহলে নি:সন্দেহে অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। এদেশের রাজনীতি প্রধানমন্ত্রি শেখ হাছিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রি খালেদা জিয়াসহ গুটি কয়েক ব্যক্তির ভাবমূর্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কিন্তু সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ভাবমূর্তি সম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই সাধারন মানুষ রাজনৈতিক আস্তা ফিরে পাবে।আর রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেলেই আমরা অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পাব।