,হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি,
মা হামিদুন্নেছা বেগম (৭০) ও সন্তান আরাফাত হোসেন (১২) এর মৃত্যুর খবর শুনে বিদেশ থেকে ছুটে আসেন হামিদুন্নেছা বেগম তিন ছেলে ইউসুফ, ইসমাইল ও কামরুল। শোকে কাতর পুরো পরিবারসহ এলাকাবাসী। দুপুরের পর চাঁদপুর থেকে পোষ্টমটেম সেরে এর লাশ হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ নং বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসা গ্রামে বকাউল বাড়ীতে আনা হলে শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের হাজার হাজার মানুষ একনজর দেখার জন্য বাড়ীতে ভিড়জমায়। পরে দুজনের নামাজের জানাজা শেষে ২৯ মে বিকাল তিন ঘটিকার সময় নিজ বাড়ীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা কামরুলের স্ত্রী ফাতেমা ও ভাগনি তাছলিমা কে পরিবারের লোকদের জিম্বায় দেওয়া হয়। আসল খুনী আটক না হওয়ায় এলাকাবসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইউসুফের স্ত্রী ও আরাফাতের মা শাহিনা বেগম জানান, হামিদুন্নেছার তিন ছেলে প্রবাসী। তিন ছেলের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তারা ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। সোমবার রাতে নাতিনাতনিদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তার শাশুড়ি। ঝড়ের রাতের আধারে ঘরে মধ্যে উচ্চ সুরে কথা শুনা যায়। আমরা এ ঘর থেকে চিৎকার দিলেও কথা শুনা যায় না। একটু পর বৃষ্টি একটু কমলে আমরা ঘরে গিয়ে দেখি ঘরের দরজা ভেঙে কে বা কারা ঘরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা আমার শ^াশুরী ও আমার ছেলেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে শ^াশুরী হামিদুন্নেছা নিহত হন। আর ছেলে আরাফাত হোসেনকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে মেয়ে হালিমা আক্তার মিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমার যাওয়ার আগে ঘাতকরা চলে যায়। তাই আমরা কাউকে চিনতে পারিনি।
মৃত হামিদুন্নেছার মেয়ে হালিমা বেগম বলেন,আমার মেয়ে তাছলিমা ছোট বেলা থেকেই আমার মার কাছে থেকে বড় হয়েছে। আমার মা তাছলিমাকে পাশের বাড়ীর প্রবাসী মিলনের সাথে বিয়ে দেয়। ঐ বিয়ে বেশি দিন টিকেনি মিলনে শারিরীক অক্ষমতার কারণে। পরে তাছলিমাকে ঐ সংসার থেকে ছেড়ে নিয়ে আসে আসি। এর পর পর মিলনের ছোট ভাই আলম প্রস্তাব বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয় তাছলিমাকে বিয়ে করতে। তাছলিমা সম্মতি না হওয়ায় তাছলিমার পরিবারকে দেখিয়ে দিবে বলে হুমকি দিয়ে আসতো। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই। এর কয়েক মাস পরে তাছলিমাকে ঢাকার ব্যবসায়ির রাজ্জাকের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেই। বিয়ে কয়েক মাস পার হলে তাছলিমার আগের স্বামী মিলন কৌশলে তাছলিমার কাছ থেকে বর্তমান স্বামী রাজ্জাকে মোবাইল নাম্বার নেয়। এর পর থেকে তাছলিমার প্রাক্তন স্বামী বর্তমান স্বামী রাজ্জাকের কাছে বদনাম ছড়ায়। এর পর থেকেই রাজ্জাক তাছলিমার সাথে খারাপ আচরণ এবং নিজের বাড়ীতে তুলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এর মধ্যে তাছলিমার দু জামাই এক হয়ে তাছলিমার পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্থানীয় মোজাম্মেল বলেন, হত্যার পেছনে দুইটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো তাছলিমার বিয়ে নিয়ে অসন্তোষ এবং অপরটি হলো মৃত হামিদুন্নেছার ছেলে কামরুলের আটক বউ ফাতেমার সাথে পরকিয়া থাকতে পারে। কারণ ছেলের বউ এর সাথে বৃষ্টি রাতে দেখা করতে এসে হয়তো শ^াশুরি বা পাশে থাকা আরাফত বা মিম দেখে পেলেছে এবং এ কথা বলে দিবে। তাই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। যেনো কোন স্বাক্ষী না থাকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.অরুণ বলেন,রাতে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিবারে তিন পুরুষ সদস্য প্রবাসে থাকে। দাদিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। আর নাতি-নাতনিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর নাতি মারা যায়। তার জিহ্বা কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
পারভেজ নামে একজন আত্নীয় বলেন, তাছলিমার দুস্বামী মিলে অথবা আটক ফাতেমার পরকিয়া দেখে পেলায় খুন হন তারা।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা করেন। পোষ্টমোটেম শেষে দাদি-নাতির লাশ দাপনের জন্য নিজ বাড়ীতে পাঠানো হয়েছে এবং আমরা চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি মুল আসামীকে আটক করার জন্য। আমি যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে তাদেরকে তাদের পরিবারে জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।