মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ শুরু হবে। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে ১২ অক্টোবর রাত থেকে ২২ দিন নদীতে ইলিশ আহরণ বন্ধ রেখেছে। ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে ইলিশ সহ সকল ধরনের মাছ আহরণ শুরু হবে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায় , চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনার ৭০ কি.মি. অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে শনিবার ২ নভেম্বর রাত ১২টায়। সে জন্য নদীতে মাছ আহরণের জন্য জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌ-সীমানায় ৪৪ হাজার ৩৫জন নিবন্ধিত জেলেরা শনিবার মধ্য রাতে মাছ আহরণ করতে নামবে। তবে মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা জেলেরা সফলভাবে বাস্তাবায়ন করেছে। জেলা টাস্কফোর্সের দাবী এবছর মা ইলিশ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়,অভিযানকালে অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এবার জেলা টাস্কফোর্স ৫০৩ টি অভিযান , ৬৫টি মোবাইল কোর্ট, ২১২টি মামলা ও ১৮২ জনকে জেল হাজতে প্রেরন করেছে। আর ১৫ লক্ষ ১৮৫ মিটার কারেন্টাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে এবং ২৪৩১ মে.টন ইলিশ আটক করে গরিব- দুস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূল এলাকায় অধিকাংশ মানুষ মৎস্য আহরন ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলেরা অধিকাংশই গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে। কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করায় তাদের আটক করে মামলা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ২২দিন বেকার থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছে।
সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, আনন্দ বাজার, রনাগোয়াল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে , জাল ও নৌকা মেরামত কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শাহজান মাঝী ও আনোয়ার মাল বলেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দেয় তা আমরা মানি। তবে মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকার কিছু অসাধু জেলে এসে অনেক মাছ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা মাছ পাইনা। আমাদের ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর নিষেধাজ্ঞা সময়কালে যে পরিমান খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখনকার বাজারে যে অবস্থা,জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশী, সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ চালানো আমাদের অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার ২২দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে,এবার তা অনেকটাই সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় কোন জেলেই নদীতে নামতে পার নাই। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি। দেখা যাক অভিযান শেষে কি পরিমান ইলিশ পাওয়া যায়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন,‘ ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এ সময়টাতে মিঠাপানিতে ছুটে আসে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স তা সর্বাত্মক সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জনপতি ৪০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এবছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারন ইলিশ কিনে খেতে পারবে।