# মৃত হামিদুন্নেছার নাতিনের দু স্বামীর রশি টানা টানিতে দাদির উপর প্রতিশোধ
# মৃত হামিদুন্নেছার ছেলে কামরুলের স্ত্রী ফাতেমার সাথে পরকিয়ার দেখে যাওয়ায় এ হত্যাকান্ড
# পুলিশ বলছে ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে আটক করা হবে। শুধু একটু সময় লাগবে।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন,হাজীগঞ্জ(চাঁদপুর) প্রতিনিধি,০১৭১৬০৮৫৯৭৪ (২৮.০৫.২০২৪)
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ নং বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসা গ্রামে বকাউল বাড়ীতে গভীর রাতে বসতঘরে দস্যুতা কালে এক বৃদ্ধা ও তাঁর নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় বৃদ্ধার আরও এক নাতিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) ভর্তি করা হয়েছে। ২৭ মে সোমবার দিবাগত ঝড়ের রাতে ১২টা সময় এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন, রাধাসা গ্রামের বকাউল বাড়ীর নিহত সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী হামিদুন্নেছা (৭০) নাতি আরাফাত হোসেন (১২)। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদয়ালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও আহত নাতনি হালিমা আক্তার মিম শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত বৃদ্ধার ছোট ছেলের স্ত্রী জানান, হামিদুন্নেছার তিন ছেলে প্রবাসী। তিন ছেলের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তারা ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। সোমবার রাতে নাতিনাতনিদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তার শাশুড়ি। ঝড়ের রাতের আধারে ঘরে মধ্যে উচ্চ সুরে কথা শুনা যায়। আমরা এ ঘর থেকে চিৎকার দিলেও কথা শুনা যায় না। একটু পর বৃষ্টি একটু কমলে আমরা ঘরে গিয়ে দেখি ঘরের দরজা ভেঙে কে বা কারা ঘরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা আমার শ^াশুরী ও আমার ছেলেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে শ^াশুরী হামিদুন্নেছা নিহত হন। আর ছেলে আরাফাত হোসেনকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে মেয়ে হালিমা আক্তার মিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমার যাওয়ার আগে ঘাতকরা চলে যায়। তাই আমরা কাউকে চিনতে পারিনি।
মৃত হামিদুন্নেছার মেয়ে হালিমা বলেন,আমার মেয়ে তাছলিমা ছোট বেলা থেকেই আমার মার কাছে থেকে বড় হয়েছে। আমার মা তাছলিমাকে পাশের বাড়ীর প্রবাসী মিলনের সাথে বিয়ে দেয়। ঐ বিয়ে বেশি দিন টিকেনি মিলনে শারিরীক অক্ষমতার কারণে। পরে তাছলিমাকে ঐ সংসার থেকে ছেড়ে নিয়ে আসে আসি। এর পর পর মিলনের ছোট ভাই আলম প্রস্তাব বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয় তাছলিমাকে বিয়ে করতে। তাছলিমা সম্মতি না হওয়ায় তাছলিমার পরিবারকে দেখিয়ে দিবে বলে হুমকি দিয়ে আসতো। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই। এর কয়েক মাস পরে তাছলিমাকে ঢাকার ব্যবসায়ির রাজ্জাকের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে দেই। বিয়ে কয়েক মাস পার হলে তাছলিমার আগের স্বামী মিলন কৌশলে তাছলিমার কাছ থেকে বর্তমান স্বামী রাজ্জাকে মোবাইল নাম্বার নেয়। এর পর থেকে তাছলিমার প্রাক্তন স্বামী বর্তমান স্বামী রাজ্জাকের কাছে বদনাম ছড়ায়। এর পর থেকেই রাজ্জাক তাছলিমার সাথে খারাপ আচরণ এবং নিজের বাড়ীতে তুলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এর মধ্যে তাছলিমার দু জামাই এক হয়ে তাছলিমার পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
স্থানীয় মোজাম্মেল বলেন, হত্যার পেছনে দুইটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো তাছলিমার বিয়ে নিয়ে অসন্তোষ এবং অপরটি হলো মৃত হামিদুন্নেছার ছেলে কামরুলের আটক বউ ফাতেমার সাথে পরকিয়া থাকতে পারে। কারণ ছেলের বউ এর সাথে বৃষ্টি রাতে দেখা করতে এসে হয়তো শ^াশুরি বা পাশে থাকা আরাফত বা মিম দেখে পেলেছে এবং এ কথা বলে দিবে। তাই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। যেনো কোন স্বাক্ষী না থাকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.অরুণ বলেন,রাতে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিবারে তিন পুরুষ সদস্য প্রবাসে থাকে। দাদিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। আর নাতি-নাতনিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর নাতি মারা যায়। তার জিহ্বা কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
পারভেজ নামে একজন আত্নীয় বলেন, তাছলিমার দুস্বামী মিলে অথবা আটক পাতেমার পরকিয়া দেখে পেলায় খুন হন তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দে বলেন, এই দস্যুতার ঘটনায় হত্যার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। সেই সব সূত্র ধরে তদন্ত কাজ চলছে। ইভটিজিং, পরকীয়া ও এক নাতনির দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের আঁচ পাওয়া গেছে। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিএম,পিপিএম (বার)।
র্যাবের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন(নাম গোপন রাখা শর্তে) বলেন,তাছলিমার প্রথম স্বামীর পরিবার এবং মামীর ফাতেমার পরকিয়া ঘটনা নিয়ে তদন্ত কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে এ দুটি সত্যতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বলেন, ঘটনাস্থলে পিবিআই ও পুলিশের তদন্ত টিম কাজ করছে। আমরা দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। আর লাশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মগে প্রেরণ করা হয়ছে। এখনো এ ব্যাপারে কোন মামলা হয়নি। রাতে বাদী আসলে মামলা হবে। ঘটনা ত্রিমুখী। যার কারণে একটু সময় লাগবে আসল ঘটনা বের করতে।