তার চিকিৎসকরা বলছেন, ম্যাডাম হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার সময় যেমন ছিলেন এখনো তেমনই আছেন। অর্থাৎ তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আগের তুলনায় তার অবস্থার উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই হয়নি। বর্তমানে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হার্ট, কিডনি ও লিভারের সমস্যা আগের মতোই আছে।
দীর্ঘ ৫৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ১৯ জুন রাত আটটা ৩৪ মিনিটে বাসভবন ফিরোজায় আনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। এখন তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা একটা মিনি হাসপাতালের মতোই। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্টসহ মোটামুটি প্রাথমিকভাবে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারণ, প্রায় প্রতিদিনই তার কোনো না কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে। যাতে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা কী, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা আগের মতোই আছে। অর্থাৎ তিনি হাসপাতাল থেকে যেমন এসেছেন, তেমনই আছেন। কোনো পরিবর্তন নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, আমরা প্রতিদিনই ম্যাডামকে দেখতে তার বাসায় যাই। তাকে বাসায় রেখে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো যায়, তার সবগুলোই করানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ম্যাডামকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। সেরকম কিছু হলে আপনারা জানতে পারবেন।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসকদের নিষেধ থাকার কারণে আমরা কেউ তাকে (খালেদা জিয়াকে) দেখতে যাইনি। যতটুকু জানি, বাসায় তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা নিয়মিত তাকে দেখতে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির চেয়ারপারসনের একটি সূত্র জানান, চিকিৎসকদের বাইরে খালেদা জিয়াকে দেখতে তার বাসভবন ফিরোজায় মাঝেমধ্যে যান ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সার্বিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তার পুরাতন রোগ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস আছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর এখন তার হার্ট, কিডনি ও লিভারের অবস্থা ভালো নয়। যেকোনো সময় যেকোনো কিছুই ঘটে যাওয়ার মতো শঙ্কা রয়েছে। তবে, বর্তমানে তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। মোটামুটি খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন।
তারা আরও বলছেন, সরকারের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশ নেওয়া সম্ভব হবে না। সংসদে সর্বশেষ আইনমন্ত্রী বলেছেন- চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। যা কোনো দিনই সম্ভব বলে মনে হয় না। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। তার পরিবারও এ রকম প্রক্রিয়ায় তাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য রাজি নয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অনেকটাই ভালো। চিকিৎসকরা নিয়মিত তাকে দেখতে যান। তার চিকিৎসা আপাতত বাসায় চলবে।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, আমরা বারবার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারকে অনুমতি দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু সরকার তা দেয়নি।
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবেন কি না জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। তার বয়স, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- সবকিছু মিলিয়ে তার অবস্থা ভালো বলা যায় না।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডামকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার ইস্যুতে সরকার তার অবস্থান ঘনঘন পরিবর্তন করছে। কখনো তারা ইতিবাচক অবস্থানে থাকে, আবার মুহূর্তের মধ্যে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে পুরোপুরি নেগেটিভ অবস্থানে চলে যায়। আসলে ম্যাডামের ইস্যুতে সরকার তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মনে হচ্ছে, কোনো একটি পক্ষ সেখানে সরকারকে বারবার প্রভাবিত করছে। যা আমাদের রাজনীতির জন্য ভালো লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না।