প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২১
ভোজ্যতেলের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন তেলের বিপণন পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে দেশে খোলা বা লুজ সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়। সব ধরনের সয়াবিন তেল বিক্রি হবে পেট বোতলে। খোলা হিসেবে বিক্রি হবে শুধু পামঅয়েল।\হশিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা সমকালকে বলেন, সয়াবিন তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ খুব জরুরি। এ উদ্যোগ সম্প্রসারণ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এর বিপণন পদ্ধতিতে কিছু সংস্কার আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জনগণ যাতে ন্যায্য মূল্যে সঠিক পণ্য পায়, তা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য। এজন্য সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে সয়াবিন ও পামঅয়েলের পার্থক্য বুঝে কেনা বেশ কঠিন। দুই ধরনের তেলের দামেও বেশ পার্থক্য রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতা, কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ এবং উৎপাদন, প্যাকেজিং, সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।\হশিল্প মন্ত্রণালয়ের ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের পরিচালক আল আমিন সরকার সমকালকে বলেন, লুজ সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ করে শুধু বোতলজাত সরবরাহ রাখা জরুরি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তাই হচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগিরই ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করে কবে থেকে লুজ সরবরাহ বন্ধ করা হবে তা নির্ধারণ করা হবে।\হট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ। ঠিক এক বছর আগে দেশের বাজারে প্রতি লিটার ৮২ থেকে ৮৬ টাকা দরে খোলা সয়াবিন পাওয়া গেছে। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা। রাজধানীর কোনো কোনো বাজারের দোকানে এর চেয়ে বেশি দামেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। এ সময়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ এবং পামঅয়েলের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি লিটার পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকা দরে।\হবাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কাস্টমস থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, দেশে যত ভোজ্যতেল আমদানি হয়, তার ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ পামঅয়েল। ২০ থেকে ২৫ ভাগ সয়াবিন তেল। কিন্তু বাজারে পামঅয়েল নামে যা বিক্রি হয়, তা আমদানির তুলনায় কম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, খোলা সয়াবিনের নামে পামঅয়েল বিক্রি হয়। এমনকি অনেক বোতলজাত তেলেও পামঅয়েলের মিশ্রণ থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন। এজন্য বাজার থেকে স্যাম্পল বা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।\হবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় সোয়া দুই লাখ টন। বাকিটা আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। দেশে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে। বড় কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারে সরবরাহ করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। অপরিশোধিত সয়াবিন পরিশোধনের পর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। এছাড়া ১৮ হাজার ৪১৫ টন পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। অপরিশোধিত পামঅয়েল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার টন। এ সময়ে পরিশোধিত পামঅয়েল আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার টন। এছাড়া ১০ লাখ ৯৪ হাজার টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে, যা থেকে ১৪ শতাংশ তেল পাওয়া যায়।\হলুজ সয়াবিন বিক্রি বন্ধের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সমকালকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণের জন্য খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধের কথা বলা হচ্ছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে উৎপাদক কোম্পানি তা পালন করবে। তবে মনে রাখতে হবে, খোলা সয়াবিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। হঠাৎ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। এজন্য কোম্পানিগুলোকে সময় দিতে হবে। প্যাকেজিং ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য পুঁজি সহায়তাও দেওয়া দরকার হবে।\হঅপরদিকে খোলা সয়াবিন বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি ডিওতে বিক্রি করা তেল ১৫ দিনের মধ্যে মিলের গুদাম থেকে ক্রেতাকে সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিশোধনকারী কোম্পানির মিলে গোয়েন্দা নজরদারি ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং বাড়ানো হবে। পাশাপাশি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক্ক কমানোরও উদ্যোগ নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
Admin
Posted on by editor