রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ছাত্রীকে সম্প্রতি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী বিয়ের বয়স হয়নি মেয়েটির। তবে, মেয়ের বাবা মা যে বায়োডাটা দেখিয়েছেন তাতে মেয়েকে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভালো পাত্র পাওয়া গেছে, তাই এক প্রকার হুট করেই বিয়ে। ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণ শেষ করে মাত্র কাজে যোগ দিয়েছে।
মেয়েটির বিয়ের ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু পরিবারের চাপ ও ভয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বিয়েতে অমত করতে পারেনি। নানাভাবে তার অমত জানিয়েছিল পরিবারকে। তবে, তার বাবা-চাচা ও পরিবার তার মতকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। চাপা পড়েছে তার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।
বিয়েটা পারিবারিকভাবে অনেকটা মেয়ের পরিবারের আগ্রহেই হয়েছে। তাদের একটাই কথা, সবসময় ভালো পাত্র পাওয়া যায় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বিয়ে করতে হয়েছে। পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে পাচ্ছিল না মেয়েটি। একা লড়াই করার শক্তিও তার ছিল না। তার, এই অসহায়ত্বের কথা বন্ধু-বান্ধব কাউকে বলারও সুযোগ পায়নি সে। হুট করেই হয়েছে বিয়েটা। তার মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তার সব স্বপ্ন ভেঙেচূড়ে দিয়েই হয়েছিল বিয়েটা।
বিয়ের দু’দিন পর মেয়েটি সুযোগ পেয়েছে তার কোনো এক বন্ধুকে বিষয়টি জানাতে। সেই বন্ধুর থেকে জেনেছে অন্যরা। কিন্তু, কি আর করা! বিয়ে তো হয়েই গেছে। তবুও, একজন কি মনে করে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে জানালো বিষয়টা। মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফউদ্দিনকে নির্দেশনা দেয় দ্রুত মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করতে এবং মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্টদেরকে বিরত রাখতে। মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয় ওসিকে।
ওসি লালবাগ অত্যন্ত তৎপরতার সাঙ্গে মেয়েটির বাড়িতে পুলিশের একটি টিম পাঠান। পুলিশের উপস্থিতিতে মেয়েটি সাহসী হয়ে ওঠে। বাড়িতে তার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে পুলিশের সঙ্গে চলে আসে সে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে মিডিয়া উইং। তাকে সাহস দেয়। আশ্বাস দেয়, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর কোনো সিদ্ধান্ত কেউ চাপিয়ে দিতে পারবে না। সুযোগ ও সাহস পেয়ে মেয়েটি সেই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদের ইচ্ছা ব্যক্ত করে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক পদক্ষেপের পর মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং এ বিষয়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদকে অবগত করে। আইজিপি মেয়েটির অধিকার ও ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ সমুন্নত রাখতে উপযুক্ত সহায়তা দিতে নির্দেশ দেন।
অবশেষে, মেয়েটির প্রবল ইচ্ছায় এবং একটি নারী অধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় আইনি উপায়ে সেই দিনই বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। মিডিয়া উইং এর অংশগ্রহণে মেয়েটির স্বামী ও উল্লিখিত কর্মকর্তা এবং তার পরিবার পুরো প্রক্রিয়ায় সাবলীলভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মেয়েটি তার পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তার পরিবারও তাকে বাড়িতে নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।
এই পরিস্থিতিতে, মেয়েটিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সেইফ হোমে আতিথেয়তা দেয়া হয়। পুলিশের সেইফ হোমে অতিথি হিসেবে দু’দিন অবস্থানের পর পুলিশের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের ইচ্ছায় পুনর্মিলন ঘটে। এরপর, আদালতের মাধ্যমে মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এসি লালবাগ এ কে নিয়মিত রায় এবং ওসি লালবাগ কে এম আশরাফউদ্দিনের পাশাপাশি ইন্সপেক্টর তদন্ত শেখ মোঃ হেলাল উদ্দিন পুরো প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
মেয়েটির নিরাপত্তা ও স্বার্থ সুরক্ষার জন্য মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। মেয়েটি তার পরিবার বা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে রাজি হয়নি। বর্তমানে সে তার পড়াশোনায় পুনরায় মনোনিবেশ করেছে।
উল্লেখ্য, গোপনীয়তা ও আইনি সুরক্ষার স্বার্থে মেয়েটি ও তার পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের নাম পরিচয়সহ প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থেকেছে পুলিশ সদর দপ্তর। উল্লেখিত সকলই তথ্যই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা।