মাহমুদুল বাসার
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো অকাল মৃত্যু বরণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গুলশান কার্যালয় থেকে ফিরে এসেছেন। তাকে নাকি ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যেই অবরোধ, হরতাল অব্যাহত আছে। অব্যাহত আছে অমানবিক, পাশবিক নাশকতা ও মানুষ হত্যার নির্মমতা। এই হত্যা লীলাকে খালেদা জিয়া আন্দোলন বলে ঘোষণা দিয়েছেন- তিনি বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত এসব চলবে। রক্তের হোলিখেলা, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে সাধারণ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করার আত্মঘাতী আন্দোলন চলবেই। পথ চলতে চলতে সাধারণ মানুষেরা মন্তব্য করছেন যে, আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আন্দোলন পরিচালনা করার মত প্রজা আর যাই হোক খালেদা জিয়ার নেই। আবার ওদিকে শেখ হাসিনার ওপর ক্ষুদ্ধ একটি পক্ষ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে খালেদা জিয়াকে পেছন থেকে উস্কানি দিচ্ছেন। তারা হনুমানের লেজের আগুনে লঙ্কা জ্বালিয়ে দেবার কাজটি করছেন। এতে তাদের লাভের অংক কদ্দূর পূরণ হবে তা ভবিতব্য জানে।
পত্রিকার পাতা খুললে চোখ বন্ধ করতে হয়ঃ রাজশাহীর তানোরে শুক্রবার সন্ধ্যায় পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া ৮ বাস যাত্রীর মধ্যে নারী ও শিশুসহ সাত জনের চিকিৎসা চলছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরা বর্তমানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ঢাকা-আরিচা মহা সড়কে যানবাহনে নাশকতা চালানোর জন্য জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অভিনব কায়দায় চারটি পেরেকের সাহায্যে এক যন্ত্র তৈরি করেছে। যা রাস্তায় ফেলে রাখলে সব ধরনের গাড়ির চাকা লিক হয়ে যাবে। এই সূযোগে তারা ঐসব গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে পারে। একটি জাতীয় পত্রিকা জানাচ্ছে, বিএনপি জামায়াত জোটের টানা অবরোধে ও হরতালের সহিংসতায় জ্বলছে সারাদেশ। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। রাস্তা-ঘাটে, বাসে-গাড়িতে কোথাও নিরাপত্তা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নামতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রতিনিয়ত আগুনে পুড়ে আহত এবং নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হচ্ছে দেশের নামি-দামি হাসপাতালগুলো। নিরহ মানুষ, গাড়ি চালক, স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে নিহতদের তালিকায় বাদ পড়ছে না ছোট্ট শিশুটিও। বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকার পর প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর ও বোমা বাজির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় গত ১৯ দিনে সারা দেশে শিশুসহ ৩১ জন নিহত এবং দগ্ধ হয়েছেন দুই শতাধিক। গত ২৬ জানুয়ারী দুপুর পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন ৮৩ জন।
মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে সড়ক পথে যাতায়াত করতে না পেরে লঞ্চ-স্টীমারে যাতায়াত করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দুবৃত্তরা লঞ্চেও আগুন দিতে এগিয়েছে। রাজধানীর শ্যামলি, মালিবাগ, সদরঘাট লঞ্চে আগুন দিয়েছে বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীরা। ঝালকাঠিতে স্টীমারে ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় বোমা হামলা করে দুুবৃত্তরা। এতে স্টীমারের ছাদে থাকা আটটি এসি পুড়ে যায়। এছাড়াও রাজধানীসহ শতাধিক স্থানে ককটেল বিস্কোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে ৫০ জনেরও বেশি।
ঢাকার সাভারের শরীফবাগ কামিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে পুলিশ এক ঝটিকা অভিযান চালিয়ে বোমা বানানোর সরঞ্জাম ও জিহাদি বই সহ শরীফবাগ কামিল মাদ্রাসার ছাত্র শিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল মাওলাকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে থানা কম্পাউন্ডে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং কালে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ৪টি নাশতকার কথা স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ওই ছাত্র শিবির নেতা।
নারায়নগঞ্জে বাসে আগুন দিতে গিয়ে ধরা পড়া এক তরুন ও মোটর গ্যারেজের মিস্ত্রিসহ দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছে, তৈমুরের ভাগিনা ছাত্রদল নেতা রশিদুর রহমান রুশোর নির্দেশে বাসে আগুন দেয়ার জন্য তাদেরকে ভাড়া করা হয়েছিলো।
এসব নাশকতা, প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞ আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জনগণের কোন সমর্থন নেই বলে আস্তে আস্তে নাশকতা বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। দেশব্যাপী চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে মানব বন্ধন ও মৌন পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন ধর্মী পেশার মানুষ। গত ২৪ জানুয়ারী প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় ‘মানুষ মেরে লাভ কার, সীমাহীন ধিক্কার,’ ‘পুড়ছে মানুষ জ্বলছে দেশ, জাগুক বিবেক কাঁদছে দেশ,’ ‘আমার স্বজন কেন পুড়ে কয়লা হবে?’ ‘নাশকতার এ কী রূপ, এটি কি আমার বাংলার রূপ’, ‘আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে’ শ্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হন তারা।
ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন দেয়ার সময় তিন নাশকতাকারিকে আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি পেট্রোল বোমা ও গান পাউডার। রাজনৈতিক সহিংসতা, জ্বালাও, দমন পীড়ন বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার ‘প্রতীকী অন^শন’ করতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ অনশনে উপস্থিত থাকবেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে একটি ট্রাকে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার সময় এক শিবির কর্মীকে গণধোলাই দিয়েছে জনতা। রংপুরের পীরগঞ্জে গোপন বৈঠক করার সময় পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সদুল্লাপুর উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমির আবদুর রউফ সরকার সহ ৪ জামায়াত শিবিরের শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ বলেছেন, আমার সৈনিকরা আক্রান্ত হলে অবশ্যই গুলি করবে কারণ, তাদের কাছে অস্ত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই তারা যে পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হবে তা সীমান্তে হোক বা বাইরে হোক সে তখন তার অস্ত্র ব্যবহার করবে। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহা পরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। শিশু ও নারীসহ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। নাশকতা প্রতিরোধে এবং দেশের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের অনেক স্থানে অরাজকতা থেমে যাচ্ছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। অল্প দিনেই আমরা এই নাশকতাকারিদের বিরুদ্ধে জয়ী হবো।
বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী টানা অবরোধে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে ৩১ বাস যাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে যাত্রাবাড়ি থানায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। সংসদেও উত্তপ্ত, বাকবিতন্ডা হয়েছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুমুকের আসামী করে গ্রেফতার করার জন্য। চলমান অবরোধে বোমা হামলা, সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, অবরোধ আহ্বানকারি বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। আর তা না হলে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কিন্তু আমাদের পরামর্শ হলো, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে সহিংসতা থামবে না। পরিবেশ আরো উস্কানিমূলক হবে। আমাদের অভিমত হলো, প্রশাসন ও জনগণ যদি সমন্বিত ভাবে পেট্রোল বোমাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে বোমা বাজরা রণে ভঙ্গ দেবে। রুখে দাঁড়ানো দরকার মিডিয়া কর্মী- সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের। কবি সুভাষ মুখোপধ্যায় বলেছেন, ‘তামাশা দেখার দিন নয় অদ্য।’ এ কথা মিডিয়া সাংবাদিক শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের বুঝতে হবে। সন্ত্রাস ও বোমা বাজদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা ও সৎ সাহস সঞ্চার করা এই মুহূর্তে বড় কাজ। সরকারকে অচল করার সঠিক পন্থা বাদ দিয়ে আপামর জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করার, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার বিরুদ্ধে দিন দিন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে, এটাই অনেকের ধ্র“ব বিশ্বাস।