চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এমরান হোসেন নামের যুবককে ফোন করে ডেকে নিয়েছে দৃর্বৃত্তরা। লোহার চেইন দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আহত এমরান বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
অসহায় দিনমজুর এমরান অর্থাভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেনা। চিকিৎসার জন্য এলাকার লোকজন কিছু অর্থ উত্তোলন করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় অপারেশন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। এতে ব্যায় হবে লক্ষাধীক টাকার বেশি। অপারেশনের পর্যাপ্ত টাকা জোগাড় হয়নি এখনও। নানাজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের ঢালী বাড়িতে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একই বাড়ির আনিছুর রহমান গংদের সাথে ইউসুব গংদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। তার জের ধরে গত রমজানে উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিষয়টি নিয়ে একাধীকবার সালিশ বৈঠক করেছেন।
তারই আলোকে গত ২৩ মে রবিবার উভয় পক্ষকে নিয়ে এলাকার শালিসগণ বিরোধ সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক করেন। সেখানে উভয় পক্ষের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষে ৪/৫ জন আহত হন। ওই সময় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় উভয় পক্ষের লোকজনকে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
ওই ঘটনায় ইউসুফ মিয়ার বড় ভাই বাচ্চু মিয়া গুরুতর আহত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ওইদিন রাতে আনিস-এর চাচাতো ভাই অসহায় এমরান হোসেনকে প্রতিপক্ষরা ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয়। এরপর, বাড়ির সামনের রাস্তার উপরে লোহার চেইন দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এমরান তাদের কবল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড় দিয়ে পালিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়ে পরিবারের লোকজন।
এ বিষয়ে এমরানের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আনিস ও হারুনদের দুইজনের মাঝে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। কিন্তু ওইদিন দুপুরে মারামারির সময় আমার ছেলে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। তারা কেন আমার একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে মারধর করলো। এখন সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার মাথায় দেশিয় অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাত করার কারণে অপারেশন করতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছেন। নয়তো তাকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এত টাকা কোথায় কিভাবে পাবো। হারুন আমার ছেলের রক্ত দিয়ে মুখ মোছে আর বলে তারে প্রাণে মেরে ফেলবো। আমি তাদের বিচার চাই।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ইউসুফ ও হারুন ঢালী গংরা যে কাজ করেছে বিষয়টি অনেক ন্যাক্কারজনক। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমরা বিচার দাবি করছি। এমরান একজন ভালো ছেলে। তাকে এভাবে আঘাত করা ঠিক হয়নি। আমরা তার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা উত্তোলন করে পাঠিয়ে দিয়েছি। শুনেছি অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে।
প্রতিপক্ষ হারুন বলেন, আমরা ১৮ বছর আগে আনিসদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছি। কিন্তু তারা আমাদের জমি দখল দিচ্ছেনা এবং রেজিষ্ট্রেশন করে দিচ্ছে না। গত রবিবার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় শালিস চলাকালীন সময় তারা আমার ভাই বাচ্চু মিয়াসহ আমাদেরকে মারধর করেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমরান মারামারির সময় আমাদেরকে মারধর করেছে। আমরা তাকে মারধর করিনি। আমরাও আদালতে মামলা করেছি।
এ ঘটনায় আনিসুর রহমান গত ২৪-এ মে সোমবার ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, ইউসুফ (৪০) হারুন ঢালী (৪৫), বাহার মিয়া (২৭) ও বাচ্চু মিয়া (৫০)।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ শহিদ হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা একজনকে আটক করেছি। অন্য আসামীদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। আসামীরা এখন পালাতক রয়েছে।