চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে মাঠে মাঠে পাকা ধানের গন্ধে বিভোর হয়ে ধানটুনি আর পাখিদের সঙ্গে লুকোচুরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী।
দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী ধানের সমারোহে যখন কৃষকের মন নেচে ওঠার কথা তখনি ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ তাদের। আগাম চলে আসা বেশ কয়েকটি মাঠে এরই মধ্যে ফসল কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও সরকারি বিধি-নিষেধের মধ্যে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক না এলে এবার কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহরাস্তিতে প্রতি বছর ধান কাটা মৌসুমে উত্তরবঙ্গ থেকে শ্রমিক আসেন। এবার বিধি-নিষেধের কারণে যথাসময়ে শ্রমিক না আসায় ধান কাটা ব্যাহত হতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু শ্রমিক এসে পৌঁছলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি ব্যয় গুণতে হবে কৃষকদের।
তবে উপজেলা কৃষি অফিস মনে করছে শ্রমিক সংকট সাময়িক। যা কয়েকদিনের মধ্যে কেটে যাবে।
শাহরাস্তি পৌরসভার বাত্তলা মাঠের কৃষক মো. আবদুল মোতালেব বলেন, প্রতি বছর রংপুর অঞ্চল থেকে এ অঞ্চলে ধান কাটার শ্রমিকরা আসেন। গত বছর করোনার মহামারি শুরুর সময় সরকারি বিধি-নিষেধে তারা আসতে না পারায় আমাদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবারও বিধি-নিষেধের কারণে তারা আসতে না পারলে আমাদের বিপাকে পড়তে হবে।
উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরকি গ্রামের কৃষক রবিউল আলম বলেন, বোরো ধানের অধিকাংশ সোনালী রঙ ধারণ করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হবে। চলতি মৌসুমে ২৪০ শতাংশ (দুই একর) জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কালবৈশাখী বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।
একই ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের কৃষক মোহন হোসেন বলেন, এ বছর ২১০ শতক জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এরইমধ্যে জমিতে প্রাকৃতিকভাবে পোকা-মাকড় কঞ্চি পুঁতে (পার্চিং পদ্ধতি) দিয়েছি। শ্রমিক না পাওয়ায় তিনি ধান কাটার কাজ শুরু করতে পারছেন না।
শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর। যার মধ্যে ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিই বোরো মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ২০ জন বীজ ডিলার, ১১ জন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সার ডিলারসহ দেড় শতাধিক পাইকারি ও খুচরা বীজ, সার এবং বালাইনাশক ব্যবসায়ী কৃষকদের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবারহ করেছে।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র দাস বলেন, এ বছর বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৫৮, ৬৭, ৭৪, ৭৫ ও বিআর ১৬, হাইব্রিড এসএল-৮, আফতাব এলপি-৭০, ছক্কা, অ্যাগ্রো-১৪, হিরা, সুপার ও ইস্পাহানি জাতের ধান চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, বিধি-নিষেধে শ্রমিক পরিবহনে কোনো বাধা নেই। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে এ সমস্যা আর থাকবে না।
এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে উৎপাদন হয় ৪৩ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন। চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ কৃষককে বীজ সহায়তা, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪৯০ জন কৃষককে সার ও বীজ সহায়তা, পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ১০০ জন কৃষককে সার ও বীজ সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন ব্যাচে সহস্রাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।