সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর গুমের বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে বিএনপি চিঠি পাঠালেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলছেন, তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি বা শোকজ নোটিশ আসেনি।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া এই সংক্রান্ত একটি পত্র শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের কাছে বিশেষ পত্র বাহক পৌঁছানো হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে সন্ধ্যায় মির্জা আব্বাসের সাথে টেলিফোনে কথা বললে তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, এই ধরনের কোনো চিঠি তার কাছে আসেনি।
দলের একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘‘ মির্জা আব্বাস দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তার মতো নেতাকে যদি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে এভাবে চিঠি ইস্যু করলে তা হবে দুঃখজনক।”
জানা গেছে, ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা নিয়ে মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানারকম গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। এরকম প্রেক্ষাপটে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চিঠি মির্জা আব্বাসের কাছে পাঠানো হলো অতি গোপনীয়ভাবেই।
গত শনিবার সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনীর উদ্যোগে এ্ক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল দলের ‘নিখোঁজ’ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার প্রসঙ্গ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আমি বুঝলাম, আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করে নাই। তাহলে গুমটা করলো কে? কারা গুম করেছে? এই সরকারের কাছে আমি এটা জানতে চাই।”
তিনি বলেন, ‘‘ ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাকবিতন্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস তাদের খুব গালিগালাজ করেছিলো তাকে। সেই শয়তানগুলো আমাদের দলে এখনো রয়ে গেছে।”
ওইসব শয়তানকে চিহ্নিত করার জন্য দলের মহাসচিরের প্রতিও অনুরোধ রাখেন মির্জা আব্বাস। ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
পরের দিন নিজের শাহজাহানপুরের বাসায় সাবেক ছাত্র দল নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে যে, গণমাধ্যম তার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘‘ আমি পরিস্কারে করে একটা কথা বলতে চাই, আমার সহজ-সরল পরিস্কার মনের সরল উক্তিগুলোকে বিকৃত করে আমাদের যে সকল সাংবাদিক ভাই্য়েরা যার যেখানে প্রয়োজন, আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য যদি বলি তার একটা লাইন কোড করে, যার যেখানে দিয়ে প্রয়োজন কেটে-ছিঁড়ে, পোস্ট মর্টেম করে, কাটপিছ করে ইচ্ছামতো লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কী কারণে করা হয়েছে তা আমি জানি না।”
আব্বাস সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং উল্লেখ করে বলেন, ‘‘একটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে- ইলিয়াস আলী গুমের জন্য বিএনপির কিছু নেতা দায়ী। এই কথা কী আমি বলেছি- কেউ কী প্রমাণ করতে পারবে। অসম্ভব, সম্ভব নয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমরা কথা বিকৃত করা হয়েছে।”
‘‘পত্রিকায় এসেছে- সরকার বা আওয়ামী লীগ ইলিয়াসকে গুম করে নাই্- এই কথাও আমি বলি নাই। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে পেচিয়ে লেখা হয়েছে, টুইয়িস্ট করা হয়েছে। বিএনপির নেতারাই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে-এই কথাটা কী আমি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হয়ে আমার বক্তব্য দেয়া সম্ভব? অর্থাত নিজের মাথায় নিজের বোমা ফুটানো-এটা সম্ভব না। এখানেও টুইয়িস্ট করা হয়েছে।’’