০৯ মার্চ ২০২১, ১
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু খারাপই হয়েছে। কয়েকদিন আগে যখন তার সঙ্গে দেখা করি তখন উনি বলছিলেন, তার ব্যথাটা আগের চেয়ে বেড়েছে। তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। যারা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তারা এসে তাকে সব সময় দেখতে পারেন না। করোনার কারণে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বোর্ড করে এসে দেখবেন সেটা সম্ভব কম হয়। তাকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা ঠিকমতো কাজ করছে না। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তার চিকিৎসা হওয়া দরকার যা এখানে সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আমরা বারবার বলেছি তার স্থায়ী মুক্তি দেওয়া হলে উনি বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারতেন।
তিনি বলেন, এবারের আবেদনে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি ছিল না। তাছাড়া লন্ডনের যে অবস্থা সেখানে এখনো লকডাউন। তাছাড়া চিকিৎসকরাও এখনো বাইরে রোগী দেখছেন না। তাই চেয়ারপারসন কি সরাসরি হাসপাতালে যাবেন নাকি কীভাবে চিকিৎসা করাবেন- এ সিদ্ধান্তটি হয়তো পরিবার এখনো নিতে পারেনি।
ফখরুল বলেন, চিকিৎসাটা পুরোপুরি ম্যাডামের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। উনি যদি বাইরে যেতে চান তাহলে সেভাবে চেষ্টা করা হবে। আমরা অপেক্ষা করছি উনার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নত হলে তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার দণ্ডের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সেই শর্ত অনুযায়ী, ঢাকার বাসায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে এবং এ সময়ে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। ওই মুক্তির মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। তার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। যা ২৪ মার্চ শেষ হবে।
এর আগেই পরিবারের পক্ষ থেকে তৃতীয় দফা মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আগের শর্ত বহাল রেখে আরও ছয় মাস মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর তাতে সম্মতি দিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে নিচ্ছেন চিকিৎসা।
এদিকে রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের যে কোনো হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিতে পারবেন। এর জন্য কোনো হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য যে আবেদন, সেটি আমাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমরা যে মতামত দিয়েছি সেটি হলো আগের মতো তার সাজা স্থগিতের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। যে শর্তগুলো আগে ছিল সেই শর্তসাপেক্ষে এটা বাড়ানো হয়েছে (শর্তগুলো হলো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন)।
তার এমন বক্তব্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকসহ সব স্তরের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, একজন বয়স্ক লোকের চিকিৎসা নিয়ে সরকার এভাবে তামাশা না করলেও পারে। চিকিৎসার কথা বলে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে অথচ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এটা সরকারের দ্বৈতনীতি ছাড়া কিছুই নয়।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন যুগান্তরকে বলেন, আশা ছিল সরকার শর্ত তুলে নেবে। কিন্তু আইনমন্ত্রী কথায় মনে হচ্ছে শর্ত তুলে নেওয়া হবে না। এটা দুঃখজনক। যদি না নেয় তাহলে প্রয়োজনে নতুন করে আবেদন করা হতে পারে। যেহেতু চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাই আশা করি শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার দেশে বা বিদেশে তাকে চিকিৎসার সুযোগ করে দেবে।
খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য জানান, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের আশা ছিল সরকার এবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি দেবে। এজন্য আমরা বিদেশ নেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু সরকারের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে এবারও বিদেশে নিতে অনুমতি দেওয়া হবে না। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ তাই বাধ্য হয়ে দেশেই চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে বিশেষায়িত চিকিৎসা করানোও সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরি তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানই দেখভাল করছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে সম্মত নয়। করোনা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে তিনি বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। তাছাড়া দলের কট্টরপন্থি ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এই মুহূর্তে চেয়ারপারসনের বিদেশ যাওয়ার পক্ষে নয়। তারা মনে করেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বিদেশে। চেয়ারপারসনও বিদেশ চলে গেলে দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হবে। এই মুহূর্তে চেয়ারপারসন রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি দেশে আছেন তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করছে। উনি বিদেশ চলে গেলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়বেন। তাই তারা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় দেশে বসেও উন্নত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে টেলিমেডিসেনের মাধ্যমে লন্ডনের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেন অনেকে।