বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০ দলীয় জোটে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন। দলের ভেতর টানাপোড়েনে ২০১৯ সালে বিএনপি ছাড়েন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ। এরপর বিএনপির জোটের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলে আসে। এবার বিএনপির সঙ্গে সবচেয়ে বড় জোট জামায়াতকে ছাড়া নিয়ে আলোচনা চলছে তুঙ্গে।
বিএনপি জামায়াতকে দলে নেওয়ায সমালোচনার মুখে পরে। এরপরও বিএনপি জামায়াতকে জোট থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু সম্প্রতি জোটের সরিক দল হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাবস্থায় জামায়াতের তৎপরতা চোখে পরেনি। জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও বিষয়টি নির্ভর করছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। কারণ তার একক সিদ্ধান্তেই গড়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক। তবে জামায়াত ছাড়া, না ছাড়ার বিষয়ে এতদিন স্পষ্ট করে কিছু না বললেও এবার বিএনপি চেয়ারপারসন নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। ফলে বিএনপি এবার জামায়াতের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে আর কোনো বাঁধা রইল না।
২০২০ সালে জুলাই থেকে বিদেশ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইনে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিষয়ে মতামত দেন। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে মুক্তিতে রয়েছেন। মুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকায় পারিবারিক পন্থায় বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা তার সঙ্গে দেখা করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে মতামত জানতে চান। তখন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নো সে (No say, অর্থাৎ আমার কিছু বলার নেই)।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র বলছে, সারা দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের কূটকৌশলের কারণে বিএনপির তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তাদের সেই কূটকৌশল ছিল-উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত প্রার্থী দেয়। বিদায়ী বছরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদস্যদের অনেকে মৌখিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের মতামত দেন।
জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ভাঙেনি। জোট নিয়ে ভিন্ন কিছু না শুনলে, অনুমান করার সুযোগ নেই।
বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকার কারণে জাতির কাছে প্রকাশে ক্ষমতা চাইতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত জাতির কাছে প্রকাশে ক্ষমা চাইবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির জোটে জামায়াতকে রাখা উচিত নয়।
এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শর্ত-সাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে একটি আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হচ্ছে। শুধু আমরা নয়, বিএনপির নেতারাও তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।