চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন বুধবার (২৭ জানুয়ারি)। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নানা উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার এই ভোটে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও ধানের শীষের ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। সবকটি কেন্দ্রে এবারই প্রথমবার ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী।
তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। পাশাপাশি কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি দলটি।
এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. হারুন উর রশীদ।
অন্যদিকে ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুজনিত কারণে এ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হবে না। তবে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে।
ইতিমধ্যে নির্বাচনি কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠানোসহ সম্পন্ন হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। ইসি আশা করছে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবে তারা। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যে উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে-সেই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের দিনে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ একটু বেশিই ছড়াবে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আর এ কারণেই সাধারণ ভোটাররাও আজকের ভোট নিয়ে রয়েছেন গভীর উৎকণ্ঠায়। এবারের নির্বাচনে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে নতুন ৮০ হাজার ভোটার প্রথম ভোট দেবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কিংবা উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই।
এদিকে চসিক নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
অর্থাৎ ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৩২৫টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংঘাত এড়াতে ২৫ হাজারের বেশি পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং আনসারের সমন্বয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
নির্বাচনে দায়িত্বরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিএমপির সাত হাজার ফোর্সের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে আরো কয়েক হাজার পুলিশকে নিয়ে আসা হয়েছে চট্টগ্রামে। সে সাথে মোতায়েন থাকছে ১২ হাজার আনসার, ২৫ প্লাটুন বিজিবি, ১ ব্যাটেলিয়ন র্যাব। ভোটের আগেই কর্ণফুলী নদীতে টহল দেবে কোস্টগার্ড।
৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব কেন্দ্রে ৫ জন সশস্ত্র পুলিশ এবং ১২ জন আনসার মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে ২ জন পুলিশ, ১০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।