সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আগামী জুন মাসে শুরু হতে পারে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটি অনুমোদন হলে দ্রুতই শিক্ষাবোর্ডগুলো থেকে প্রকাশ করা হবে বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১০ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আর এ কারণে নবম-দশম শ্রেণির প্রতিটি বিষয় থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে এ সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য নবম ও দশম শ্রেণির সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে প্রতিটি বিষয়ের জন্য দুজন সিনিয়র শিক্ষক, এনসিটিবির একজন বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ মিলে একটি দল গঠন করা হয়। এভাবে প্রতিটি বিষয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি করে দল গঠন করে সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণ করা হয়েছে। এনসিটিবির আরেকটি বিশেষজ্ঞদল ওই দলগুলোকে পরামর্শ প্রদান, দিকনির্দেশনা ও মনিটরিং করেছেন।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলতি বছরের এসএসসি-সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য আমরা একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছি। সেটি গত রোববার (১৭ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন দেয়া হলে শিক্ষাবোর্ডগুলো থেকে তা প্রকাশ করা হবে। সে অনুযায়ী এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।’
মশিউজ্জামান বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিটি বই থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিষয়বস্তু কমানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে গিয়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিকে মাথায় রেখে সিলেবাস কমানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসে যা পড়ানো হয়েছে বা পরবর্তী ক্লাসে পাবে সেসব বিষয় বাদ দিয়ে যেগুলো না পড়লে একাদশে গিয়ে বুঝতে সমস্যা হবে সেসব বিষয় রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বীয় বিষয়গুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় বাদ দেয়া হলেও ব্যবহারিক বিষয় থেকে তেমন কিছু বাদ দেয়া হয়নি।’ তবে তত্ত্বীয় যে বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারিকও বাদ পড়বে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহাবুব হোসেন বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসএসসি-সমমান পরীক্ষার জন্য এনসিটিবি থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পেয়েছি। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি প্রকাশ করা হবে। সেটি ক্লাসে পড়িয়ে আগামী জুন থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা হতে পারে। এ জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
এদিকে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতি বছরের এসএসসি সমমান ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
মাউশি থেকে আরো জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হবে না। চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করতে ক্লাস শুরু করা হবে। ধাপে ধাপে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর ১৬ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ছুটি ছিল। সেই ছুটি এবার ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।