অনলাইন ডেস্ক ঃ
একটি মোটরসাইকেলের পেছনের আসনে বড় একটি জাতীয় পতাকা নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা বসা। তাঁর মোটরসাইকেলের পেছনে একটি ছাদখোলা গাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। এই গাড়িকে অনুসরণ করে চলছে বহরের বাকি গাড়িগুলো। কোনো গাড়িতে বাজছে ‘এগিয়ে চলো বাংলাদেশ, পাল উড়িয়ে দাও’, আবার কোনো গাড়িতে উন্নয়নের গান। আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুপুর ১২টার দিকে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন এবং এই প্রচারাভিযানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের আজকের নির্বাচনী প্রচারণায় শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড় ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পীরা পিকআপে চড়ে এই প্রচারণায় অংশ নেন।
নির্বাচনী প্রচারের উদ্বোধনের সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরাই বিজয়ী হবে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছি। এবার ২০১৮ সালে আমরা আজ শপথ নেব—একাত্তরের পরাজিত শক্তি যারা আজও আছে এই বাংলার মাটিতে; সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যার নেতৃত্বে রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা বাই চান্স’ জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি, এই দল খুনিদের দল, এই দল দুর্নীতিবাজদের দল, তাদের আমরা পরাজিত করব।’
বিএনপির দুর্নীতির কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজকে এই দলের নেতা পলাতক, দণ্ডিত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লন্ডন থেকে কামাল হোসেনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, মান্না, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্ব দিচ্ছে খুনি ওই দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান; এক সময়ের হাওয়া ভবনের যুবরাজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ শেখ হাসিনার সৎ, বলিষ্ঠ, পরিশ্রমী, সাহসী নেতৃত্বের পেছনে। শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেল, তাঁর নেতৃত্বে কারা আছে, সেটাই প্রমাণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।’
শিল্পী, সাহিত্যিকদের কষ্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা এই দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তাপের মধ্যে বসে আছেন একটি চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে। আপনাদের এই চেতনাকে আমি সম্মান জানাচ্ছি, স্যালুট জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন মরা গাঙ নয়, এখানে জোয়ার নেমেছে—সারা দেশের নৌকার যে গণজোয়ার সেই গণজোয়ারের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ১৯৭১ সালের মতো আবারও সাংস্কৃতিক অঙ্গন জেগে উঠেছে নব বিজয়ে, আবারও তাঁরা মুখরিত হবে, পরাজিত করবে সাম্প্রদায়িকতার সেই অপশক্তিকে এই অঙ্গীকার নিয়ে আসুন আমরা এই বিজয়ের মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরেকটি বিজয় ছিনিয়ে আনব ৩০ ডিসেম্বর। সময়ের অপেক্ষা, সারা দেশ প্রস্তুত। আজ নৌকার জোয়ার, ধানের শীষের গণ ভাটা।’ এরপর তিনি প্রচারাভিযানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রচারাভিযান শুরুর সময় শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড় ও বুদ্ধিজীবী সবাই একে একে পিকআপ ভ্যানে ওঠেন। এরপর চিত্রনায়ক শাকিল খানের ছাদখোলা গাড়িতে ওঠেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। একই গাড়িতে আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামও ছিলেন। তাঁদের গাড়িটি প্রচারাভিযানের শুরুতে দলের স্লোগান দিয়ে চলতে শুরু করে।
প্রচারাভিযানের গাড়িগুলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে টিএসসি, শাহবাগ মোড়, বাংলামোটর মোড়, ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে থামে। পথে তারকারা সবার কাছে আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের উন্নয়ন ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক হিসাবের তথ্য সংবলিত একটি পুস্তিকা ও বিএনপি-জামায়াতকে ভোট না দিতে লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় অনেক পথচারী আগ্রহ নিয়ে এসব লিফলেট ও পুস্তিকা সংগ্রহ করেন।
আওয়ামী লীগের প্রচারাভিযান ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ সাদ রুপু, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, অভিনেতা জাহিদ হাসান, মাহ্ফুজ আনাম, শহীদুল আলম সাচ্চু, চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস, নূতন, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, আজমেরী বাঁধন, শামীমা তুষ্টি, চলচ্চিত্র অভিনেতা সাইমন সাদিক, কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেল প্রমুখ।