মাহমুদুল বাসার
কলামিষ্ট ও প্রবন্ধিক
আজকাল অন্তঃসারশূণ্য আত্মশ্লাঘা পরিচয়য়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে অনেকে হাজীগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার বলে নিজেদের নাম জাহির করেন। তারা তো কূপমন্ডুক, তাই কুয়োকে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি কবেল মনে করেন। ধর্মের আসকান পেতে তোলা আদায়কারিরা যদি উন্নয়নের কারিগর ভাবেন তাহলে বলার কিছু নেই।
কিন্তু আমরা দিব্য চোখে দেখে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করছি যে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমই হাজীগঞ্জ-শাহরস্তির উন্নয়নের রূপকার। এটা আমরা কোনো সরকারি দপ্তরের প্রকাশিত ঢাউস ওজনের বই বা পরিসংখ্যান দেখে বলছি না; প্রত্যক্ষ সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে বলছি।
যোগাযোগ হচ্ছে সভ্যতার বাহন। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিকে সভ্যতার আলোতে টেনে এনেছেন মেজর রফিক অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করে। অতীতের ১০০ বছরের মধ্যে কেউ এত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেননি। অতি সম্প্রতি হাজীগঞ্জ টোরাগড়ের প্রবেশপথে এবং ‘মিঠাইনার পোল’- চাঁদপুর যাওয়ার পথে যে ব্রিজ দুটো মেজর রফিক নির্মাণ করে দিয়েছেন; এর প্রশংসা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। একটানা প্রায় ৪০ বছর ধরে জ্বরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দুটোর ওপর দিয়ে ভারি ভারি যানবাহন চলেছে। তখন যে কোন সময় দুঘর্টনা ঘটে মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিলো। মেজর রফিকের কর্মদক্ষতার গুণে আজ ব্রিজ দুটো নির্মিত হয়েছে, অগণিত মানুষ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই দুটো ব্রিজ পুরো চাঁদপুর জেলার উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম। ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের সংযোগও ব্রিজ দুটো। কত ভারি ভারি মালবাহী ট্রাক এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে।
সমগ্র হাজীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ডিগ্রি কলেজ, ‘হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ’টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড়ে। এলাকাটি তখন ছিলো অজঁপাড়াগাঁ। আজো অঁজপাড়াগাঁ-ই থাকতো। যদি মেজর রফিক ১৯৯৬ সালের সরকারের আমলে ডাকাতিয়া নদীর উপর বিশাল ব্রিজটি নির্মাণ করে না দিতেন। যোগযোগের অভাবে, প্রতিযোগিতায় হাজীগঞ্জ মডেল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের দাপটে অন্ধকারে তলিয়ে যেতো ‘হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ’। এই প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠটি মেজর রফিকের কর্মদক্ষতার গুণে রক্ষা পেলো। অথচ বিএনপি- জামায়াতের শিক্ষকরা মেজর রফিকের প্রতি নূন্যতম কৃতজ্ঞতা ও স্বীকার করেন না। ওই বিদ্যাপীঠ থেকে ষড়যন্ত্র করে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন মননশীল শিক্ষকে লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করেছে। এখনো বিদ্যাপীঠটি উগ্র, জঙ্গী-জামায়াতদের দখলে।
শুধু অবকাঠামোগত দিক থেকে নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক পরিচালিত, সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতি উপহার দিয়েছেন মেজর রফিক হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে। সেদিন ‘নতুনের ডাক’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে যে, হাজীগঞ্জ ‘আল কাউসার’ স্কুল থেকে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গীবাদী, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পরিচালিত হয়। মেজর রফিকের মত বীরমুক্তিযোদ্ধা যদি এই নির্বাচনী এলাকার এমপি না হতেন তাহলে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আরো বিস্তার ঘটতো। মেজর সাহেব এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘জামায়াত জনগণকে ধর্মান্ধতার পথে নিয়ে যাচ্ছে। ধর্মান্ধতা ধর্ম নয়।’ সম্পূর্ণ সঠিক কথা এটি। আমরা এই কথার সঙ্গে একমত। মেজর রফিকের বক্তৃতায় থাকে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা, যুক্তির পরম্পরা। পরিশেষে তার প্রতি আমাদের আবেদন, তিনি যেন তার দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেন । বিপদের দিনে দলের লোকেরাই পাশে এসে দাঁড়াবে।