শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটাচলা করা অত্যন্ত জরুরি। ভোরবেলা যুবক থেকে বৃদ্ধ সকলেই হাঁটতে বেরিয়ে যান। হাঁটার সময় সঙ্গে ব্যাগ বা ভারী কোনো বস্তু রাখবেন না। ব্যাগ নিতে হলে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের পরিবর্তে পিঠে, দুই কাঁধে রাখা যায় এমন ব্যাগ ব্যবহার করুন।
একজন অল্পবয়সী ব্যক্তি ও বৃদ্ধের হাঁটাচলার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যুবক বা কম বয়সী ব্যক্তিদের তুলনায় বয়স্কদের হাঁটাচলার সময় বিশেষ কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিওথেরাপিস্ট ডেমিয়েন পাওয়েলের মতে, একজন সুস্থ-সবল যুবক যখন হাঁটতে বের হয় তখন তার শরীরের নীচের অঙ্গের জোড়াগুলি তাকে সম পরিমাণ শক্তি যোগায়। নিতম্ব, হাঁটু ও পায়ের পাতার জোড়-এ সবই সমান পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে। এর বিপরীতে একজন ষাটোর্ধ ব্যক্তি একই গতিতে হাঁটার শক্তি পান না। তিনি অ্যাকিলিস টেনডনকে এর জন্য দায়ী করেছেন। অ্যাকিলিস টেনডন অর্থাৎ বার্ধক্যজনিত পেশীর অভাব। পাওয়েলের মতে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে হাঁটার জন্য ৭৪ শতাংশ শক্তি যোগায় নিতম্বের জোড়, ১৩ শতাংশ হাঁটু আর ১২ শতাংশ পায়ের পাতা।
উল্লেখ্য, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাঁটার গতি কমে আসে। তাদের দেহভঙ্গি ঠিক থাকে না। এমনকি কিছুক্ষণ হাঁটার পরই তারা তাল হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি হাড়ের রোগ, হৃদরোগ, হাঁপানি বা শরীরের কোনো অংশে ব্যথা থাকলে হাঁটাচলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে রাখার কথা বলছেন ফিজিওথেরাপিস্ট পাওয়েল।
স্ট্রেচিং করা : পাওয়েলের মতে, বার্ধক্যজনিত কারণে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এটি ব্যক্তির হাঁটার ধরন পাল্টে দেয়। হাঁটাচলাকে ব্যায়াম হিসেবে গণ্য করলে তার আগে স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন। এতে সুফল পাওয়া যায়।
কারেন্ট ট্রান্সলেশনাল জেরিয়াট্রিকস অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল জেরোন্টোলজি প্রকাশিত গবেষণার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কিছু ব্যায়াম বয়স্ক ব্যক্তির হাঁটার ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। চেয়ারে ওঠা-বসা করা, পায়ের পাতার জোড়ের স্ট্রেচিং, অ্যারোবিকস কন্ডিশনিং ব্যায়াম অথবা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এমন ব্যায়াম কার্যকরী প্রমাণিত হতে পারে।
এএসসিএম প্রশিক্ষক এবং ফিট হাউস ডেভিস্থয়ের প্রতিষ্ঠাতা লিসা হেরিংটন জানান, হাঁটা শুরু করার আগে পিঠ, নিতম্ব, কোয়াড, হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচিং করে নিন। সব বয়সের ব্যক্তিদের জন্যই এগুলি জরুরি। তবে বৃদ্ধদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গান শোনা : হাঁটার সময় গান শুনলে বয়স্করা বিশেষ উপকার পেতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। জার্নাল অব ফিজিওথেরাপিতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, স্ট্রোক থেকে সেরে ওঠা রোগীরা যদি হাঁটার সময় গান শোনার অভ্যাস করেন তবে তাদের হাঁটার গতি বাড়বে, প্রতি ধাপের দূরত্ব বাড়বে, শরীরের তাল বজায় রাখতেও সুবিধা হবে।
হাঁটার সঠিক দিকে নজর রাখুন : ব্রিস্টল নরডিক ওয়াকিংয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁটার সময় ব্যক্তির মাথা সঠিক অবস্থানে রাখা উচিত। ঘাড়কে মেরুদণ্ডের একটি অংশ ভেবে নিতে হবে। এবার মনে করুন আপনি নিজের মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করছেন। চোয়াল থাকবে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল।
দ্য ভেগা মেথডয়ের প্রবর্তক জো ভেগা (সিএসসিএস) বলেন, কার্যকরী ভাবে হাঁটতে হলে পদক্ষেপের সময় পায়ের গোড়ালি সবার আগে মাটি স্পর্শ করবে, এর পর মাটি ছোঁবে পায়ের সামনের অংশ। আর পা তোলার সময় পায়ের বুড়ো আঙুল মাটিতে ধাক্কা দেবে।
হাঁটা শুরুর আগে ও হাঁটাচলার মাঝে শোল্ডার শ্রাগ (ঝাঁকি) ব্যায়াম করে নেয়া উচিত। অন্যদিকে লেসলি বনসি (এমপিএইচ, আরডি, সিএসএসডি, এলডিএন) আর মাইকেল স্ট্যানটেন হাঁটার সময় হাতের সঠিক ব্যবহারের ওপর জোর দেন। তাঁদের মতে, হাঁটার সময় হাত কনুই থেকে ভাঁজ হয়ে থাকবে। ছোট ছোট পদক্ষেপ করতে হবে কিন্তু পা চলবে দ্রুত। এর ফলে গতি বাড়ার পাশাপাশি শরীরের ভারসাম্যও বজায় থাকবে বলে মনে করেন তারা। সূত্র : ইন্ডিয়া টাইমস