আমার কণ্ঠ রিপোর্ট॥
আমার স্বামী একজন ভাড়া ভ্যান চালক। অতি কষ্টে আমাদের সংসার চলে। দুই ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। ৬ জনের সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে আমি ও আমার স্বামী হিমসীমের মধ্যে পড়ি। এরই মাঝে একদিন আমাদের গ্রামের ধনি ব্যক্তি শাহাদাত হোসেন মনা গত ১০ মাস পূর্বে তাদের ঘরে কাজ মেয়ে লাগবে বলে আমার মেয়েকে ঘরে নেয়। প্রথম প্রথম আমাদের বাড়ীতে আসতে দিলেও পরবর্তীতে আর দেখা করতে দেয়নি। একদিন আমার মেয়ে যখম অবস্থায় বাড়ীতে এসে আমাদেরকে নির্যাতনের এ ঘটনা ও তার পেটে বাচ্চা আছে তা খুলে বলার পর বিষয়টি জানতে পারি।
হাজীগঞ্জের পৌর এলাকায় এক কুমারীর ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা রফাদফার চেষ্টায় লিপ্ত অভিযুক্ত ধর্ষকের পরিবার। চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কুমারীর মা বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিনে কুমারী মেয়েটি, সেই সাথে প্রাণ নাশের হুমর্কিতে দিন কাটাচ্ছে পরিবারের বাবা ও মা। ঘটনাটি পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া গ্রামের ইব্রাহীম বেপারী বাড়ীতে ঘটেছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কুমারী মেয়েটির মা রিনা বেগম বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। এতে বিবাদী হিসেবে রান্ধুনীমুড়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন মনা (৪৫),তার স্ত্রী মাফিয়া খাতুন(৩৫) ও তাদের সন্তান শাহিদ হোসেন (১৮) এর নাম উল্লেখ করেছে। এদের মধ্যে ১ নং আসামী ও ধর্ষক হিসেবে শাহিদ হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়।
ঘটনার বর্ননায় জানায় যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে বাদী রিনা বেগমের কুমারী মেয়ে (১৬) কে শাহাদাত হোসেন মনার গৃহ কর্মী হিসেবে তার ঘরে কাজে নেয়। বাড়ীর সকল কাজ শেষ করে ঘরের খাবার রুমে কুমারী মেয়েটির রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
কিছু দিন যাওয়ার পর শাহাদাত হোসেন মনার ছেলে শাহিদ হোসেন তাদের বাড়ীর কাজের মেয়ের দিকে নজর দেয়। এক পর্যায় কুমারী মেয়েটিকে বিয়ে করবে বলে প্রস্তাব দেয় এবং বিয়ে করতে না পারলে বিষ খাবে আতœহত্যা করবে বলে তাকে জানায়। কুমারী মেয়েটি তার এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এক মাস পর ডিসেম্বর মাসে কোন একদিন রাতে বেলায় কুমারী মেয়েটির রুমে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে এবং মেয়েটিকে আবারো বিয়ে করবে বলে কসম দেয় এবং এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করে। কুমারী মেয়েটি বিয়ের আশায় ধর্ষক শাহিদের লালশার শীকার হয়। কুমারী মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে আবল তাবল কথা বলে সময় পার করে। মেয়েটি পরে ধর্ষক শাহিদ এর বাবা শাহাদাত হোসেন মনা ও মা মাফিয়ার কাছে বিষয়টি খুলে বলে। তারা বিষয়টিকে বিশ্বাস না করে ঠিক ঠাক তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে এবং হুমকি দেয় যেন এ ধরনে কথা কারও সাথে না বলে। তার পর থেকে মেয়েটি ঘরের বাহিরে না যাওয়ার সকল পথ বন্ধ করে দেয় ধর্ষক শাহিদ ও তার পরিবারের লোকজন। এভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ধর্ষক শাহিদ কুমারী মেয়েটিকে বিয়ে করবে বলে বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৬ জুন ২০১৭ ইং তারিখে শাহিদের বাবা মা কুমারী মেয়েটিকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যখম করে। এক পর্যায় মেয়েটি পালিয়ে নিজ বাড়ীতে আসে এবং বিষয়টি তার বাবা মাকে খুলে বলে।
গত ১৯/০৬/১৭ ইং তারিখে মেয়েটিকে হাজীগঞ্জ শাহমিরান হাসপাতালে গাইনী ডা. তানজিনা রহমানকে দেখানোর পর জানতে পারে তাদের মেয়ে ২৯ সপ্তাহ পর্যন্ত অন্তঃস্বত্তা। এর পর মেয়েটির বাবা ও মা অভিযুক্ত ছেলে শাহিদের বাবা মাকে জানালে তারা প্রথমে হুমকি দেয় এবং পরে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি সমাধানের কথা বলে। তাদের এ প্রস্তাবে মেয়েটির বাবা মা রাজি না হওয়ায় এক পর্যায় ধর্ষকের বাবা শাহাদাত হোসেন মনা হুমকি দিয়ে বলেন, বাড়াবাড়ি করে আমার ছেলের বা আমাদের কিছু করতে পারবি না বলে হুমকি দেয়। এক পর্যায় এলাকার শালিশদারদের কাছেও কোন সঠিক সুরাহু না পেয়ে কুমারী মেয়েটির মা রিনা বেগম চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে কুমারী মেয়েটির মা রিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন ভাড়া ভ্যান চালক। অতি কষ্টে আমাদের সংসার চলে। দুই ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। ৬ জনের সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে আমি ও আমার স্বামী হিমসীমের মধ্যে পড়ি। এরই মাঝে একদিন আমাদের গ্রামের প্রবাভশালী ধনভান শাহাদাত হোসেন মনা গত ১০ মাস পূর্বে তাদের ঘরে কাজ মেয়ে লাগবে বলে আমার মেয়েকে ঘরে নেয়। প্রথম প্রথম আমাদের বাড়ীতে আসতে দিলেও পরবর্তীতে আর দেখা করতে দেয়নি। একদিন আমার মেয়ে যখম অবস্থায় বাড়ীতে এসে আমাদেরকে এ ঘটনা খুলে বলার পর বিষয়টি জানতে পারি। আমরা গরীব মামলার টাকা না থাকায় শেষ পর্যন্ত চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযোগের বিষয়টি জানার পর শাহাদাত হোসেন মনার পরিবারের প থেকে আমাদেরকে হুমকি দিয়ে আসছে এবং লাখ টাকা নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য বল প্রয়োগ করছে। এখন আমরা প্রশাসনের কাছে সু-বিচারের অপোয় আছি।
কুমারী মেয়েটি বলেন, বিয়ে করবে বলে আমাকে অনেক ভাবে ঘুরিয়েছে শাহিদ। আমার অনাগত সন্তানের বাবা শাহিদ। আমি আমার সস্তানের পিতার স্বীর্কিতি চাই।
এদিকে অভিযুক্ত শাহিদের পিতা শাহাদাত হোসেন মনা বলেন, আমার ছেলে এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমি এ মেয়েকে ১৩ মাস আগে আমার বাসা থেকে বিদায় করে দিয়েছি। তারা আমাদেরকে বিপদে ফেলে অর্থ নেওয়ার পায়তারা করছে। আমি ডিএনএ টেষ্ট পর্যন্ত অপোয় আছি। তবে তাদেরকে কোন হুমকি দেইনি এটাও মিথ্যা কথা।