মোহাম্মদ কামাল হোসেন
আসন্ন হাজীগঞ্জ উপজেলা ১২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর ছড়াছড়ি। চলিত বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বিশ^ ব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের অবস্থাও নাজুক হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ধরণের কর্মকান্ড। নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন তফসিল ঘোষনা করলেও পরে তা স্থগিত করে। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিত শান্তর দিকে আসায় নির্বাচন কমিশন আবারও নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুিত নেওয়া শুরু করে। সব ঠিকঠাক থাকলে এ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দু বছর যাবত হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর হিড়িক লেগেছে। আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীর বাহিরেও অনুপ্রবেশকারির সংখ্যা লক্ষনীয়। যারা কখনো আওয়ামীলীগ করেননি এবং আওয়ামলীগের রাজনীতির সাথে কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না তারা হঠাৎ করে উড়ে এসে ঝুড়ে বসার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। রাজনীতির ইতিহাসে এবং যে কোন আন্দোলনে যারা কখনো ছিলেন না তারা আওয়ামলীলগে গিলে খাওয়া চেষ্ঠা চলছে।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা তেমন না থাকলেও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা শতাধিক। প্রার্থীদের পরিচয় জানার জন্য এলাকায় গেলে জানা যায়, নিজ এলাকায় সরকার বিরোধী আর ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে বে নামে সংগঠনের নেতা। আবার অনেক টাকাওয়ালা আছেন যারা কখনো আওয়ামীলীগ না করলেও তার ব্যবসা বা আধিপাত্ত ঠিক রাখার জন্য নাম মাত্র আওয়ামীলীগে নাম লিখিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চায় এবং প্রচারনাও চালাচ্ছে।
বিভিন্ন ইউনিয়নের বিশিষ্টজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন স্থানীয় ভাবে যারা দল করে তাঁরা দলীয় সুযোগ সুবিধা না পেলেও দলের সাথে রয়েছে। তাঁরা দলীয় মনোনয়ন চাইলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যারা দলীয় মনোনয়ন চায় তারা তো কখনো দল করে নি। তাঁরা আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারি। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধাণ সম্পাদক অনেকে হয়েছে তারা কখনো আওয়ামীলীগ করেনি। শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আসায়। আমরা চাই যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে আসছে তাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হউক।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলেও চলমান নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন থেকে বিরত রয়েছে। তাঁরা সরকার বিরোধী আন্দেলন নিয়ে ব্যবস্ত থাকতে চান। তার পরেও বিএনপির কিছু চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি রেখেছেন। কোন কারণে দল নতুন ভাবে সিদ্ধান্ত নিলে যেন প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন জামেলায় পড়তে না হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে যুক্ত থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী প্রস্তুত করে রেখেছে। বিএনপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে কম পক্ষে ৪/৫ টি চেয়াম্যান দাবী করবে। তাঁর মধ্যে থেকে যা আদায় করতে পারে। আবার বিএনপি যদি নির্বাচনে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে না যায় তাহলে জামায়াতে ইসলাম নিজ দল থেকে চেয়ারম্যান(স্বতন্ত্র প্রার্থী দিবে। এর সুবিধা হলো বিএনপির ভোট ব্যাংক নিজেদের পক্ষে আনার জন্য। যদি চেয়ারম্যান প্রার্থী জিতে যায় তাহলে তারা বিএনপিকে বুঝাতে পারবে জামায়াত ইসলাম বিএনপি থেকে শন্তিশালী। আপর দিকে আওয়ামীলীগের মধ্যে অন্তকোন্দল থাকায় এ সুযোগে নিজেদের আনার চেষ্ঠাও থাকবে জামায়াত ইসামের।
বিএনপির একাধিক প্রার্থীর সাথে কথা হলে তারা বলেন বিএনপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছি। শুধু মাত্র দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আর বিএনপি নির্বাচনে গেলে প্রার্থী জয়ী হওয়ার চেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য দেখা দিবে। কর্মীদের মনও চাঙ্গা হবে।
জামায়াত ইসলামের কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন আমরা ১২ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে আমরা তাদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী যা আদায় করতে পারি তা হবে আমাদের দলের জন্য সুখবর। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলে আমরা নিদিষ্ট কিছু ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিবো। এতে বিএনপির ভোট ব্যাংক আমাদের পক্ষে আসলে আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু নির্বাচন থেকে সরে যাবো না।
১ নং রাজারগাঁও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৪জন, ২নং বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন, ৩নং কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৪জন, ৪নং কালচোঁ দক্ষিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন, ৫ নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন, ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৫জন, ৭নং পশ্চিম বড়কুল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন, ৮ নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৭জন, ৯ নং গন্ধ্যপুর উত্তর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ১০জন, ১০ নং গন্ধ্যপুর দক্ষিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭জন, ১১ নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ১৩জন এবং দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪জন।
গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় ১২ জন মনোনয়ন পেয়ে দুজনের পরাজয় হয়। তারা হলেন ৪নং কালচো দক্ষিন ইউনিয়ন ও ৮ নং হাটিলা ইউনিয়ন। এর মধ্যে ৮ নং হাটিলার প্রার্থী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী। আর বাকী গুলো আওয়ামীলীগের দলীয় চেয়ারম্যান। আওয়ামীলীগ দলীয় চেয়ারম্যান এর মধ্যে ২/৩ জন ছাড়া বাকীরা দলয় নেতাকর্মীদেরকে বাদ দিয়ে তারা একক ভাবে কাজ করছেন। হয়েছে অর্থ-সম্পদের মালিক। দলীয় করো সাথে সম্পর্ক ছিল না। যার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ আর দলীয় চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধ চরম। গত ৬ বছরে চেয়ারম্যানরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারা অভিযোগ করেন। তাই আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ২/৩ জন ছাড়া আওয়ামীলীগ থেকে তাদেরকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য দাবী ওঠে। দলয় ত্যাগী নেতাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীলদের প্রতি অনুরোধ করেন।