সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ইউনিয়নের মৌলারপাড় গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল মালেক ছেলে আবু তালেবের চেয়ে ১২ বছর ৬ মাস ১৯ দিন ছোট। জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) বাবার তুলনায় ছেলে বয়সে বড়, নিজের নাম, পিতা-মাতা নাম কিংবা গ্রামের নামের ভুল সংশোধনী নিয়ে মাস ও বছরের পর বছর মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাংলাদেশে ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাত্রা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত জনগণের ভোগান্তি কমাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনীর বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে ভোগান্তি কমছে না। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পেতে সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তবে ওপর মহলে যোগাযোগ ও আর্থিক লেনদেনে কেউ কেউ কাজ করে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করে দেখা গেছে, আইডি কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন অফিস এবং জেলা ও থানা নির্বাচন অফিসগুলোতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যে, এই ভুলের জন্য ইসির কর্মীরাই দায়ী। তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। কার্ডের তথ্য সংশোধনের জন্য গুনতে হচ্ছে টাকা। সাথে ভোগান্তি তো আছেই। কার্ সংশোধনে মাসের পর মাস ও অনেক ক্ষেত্রে বছরও লেগে যায়।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, যখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কাজ শুরু হয় তখন ইসির অদক্ষ কর্মীরা তথ্য সংরক্ষরণ যে ভুল করেছেন তারই কারণে আজকে নাগরিকদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মেয়ের আইডি কার্ডে নামের বানান সংশোধন বিক্রমপুর থেকে আলমগীর ফকির এসেছেন আগারগাঁও নির্বাচনী অফিসে। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, দুই মাস ধরে বিক্রমপুর থানা নির্বাচন অফিসে যাচ্ছি আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য। কিন্তু সেখানে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে। তাই সরাসরি আগারগাঁওয়ে চলে এসেছি দেখি এখান থেকে সংশোধন করা যায় কিনা। আলমগীর ফকিরের মতো সারা দেশে লক্ষাধীক মানুষ ভোগান্তিতে আছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন এনআইডি সংশোধন বন্ধ ছিল। পরে গ্রাহকদের সেবা বিবেচনা করে গত বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে অনলাইনে এনআইডি সেবা কার্যক্রম চালু করে ইসি। এখানে ক, খ, গ ও ঘ এই ৪ ক্যাটাগরি করে সংশোধনের জন্য মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসারদের সংশোধন দায়িত্ব দেয় ইসি।
ক- ক্যাটাগরিতে থানা নির্বাচন অফিসররা এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬২৮ অবেদন নিষ্পন্ন করেছেন। অনিষ্পন্ন রয়েছে ৫৩ হাজার ৬৯৬ জনের আবেদন। খ- ক্যাটাগরিতে জেলা নির্বাচন অফিসার নিষ্পন্ন করেছেন ৪৭ হাজার ২৫৭ জনের অবেদন, অনিষ্পন্ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৩ জনের আবেদন। এছাড়া গ- ক্যাটাগরিতে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নিষ্পন্ন করেছেন ২১ হাজার ৪২৭ জনের অবেদন। এ ক্যাটাগরিতে দশ জন কর্মকর্তার কাছে অনিষ্পন্ন রয়েছে ৬৯ হাজার ৪৯ জনের অবেদন। এনআইডির মহাপরিচালকের ঘ- ক্যাটাগরিতে নিষ্পন্ন করা হয়েছে মাত্র ৩১২ আবেদন, অনিষ্পন্ন রয়েছে ১ হাজার ২৪৬ জন ভোটারের অবেদন।
ইসি-সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ‘গ’ ক্যাটাগরিতে আবেদন আসে ১৪ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে তিনি বাতিল করেন ২ হাজার ৭০০ আবেদন। অনুমোদন দেন ২০০ আবেদন। তদন্ত ও ডকুমেন্ট চান ৭৯টি ফাইলের। আটটে রয়েছে ১১ হাজার ২৬৩ ফাইল।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, এনআইডি সংশোধনের ভোগান্তির বিষয়টি জানি। এজন্য ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি তদন্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।
ইসি সচিব বলেন, ‘তদন্ত কমিটি অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোটারদের এনআইডি সংশোধনের ফাইল আটকে থাকার বিষয়ে তদন্ত করবে। কমিটির প্রতিবেদনের পরই এই বিষয়ে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবো।