জুন মাসেই বছর ঘুরে আসে বিশ্ব বাবা দিবস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রথম বাবা দিবস পালন শুরু হয়। একটি পরিবারে শুধু মা বা শুধু বাবা দিয়ে কোন সন্তান সুস্থ সুন্দর এবং সাবলীলভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। মা এবং বাবা – দুজনেই একে অপরের পরিপূরক। মূলত মা’য়ের পাশাপাশি বাবাও যে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে এবং পৃথিবীর সকল পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটি পালন করা শুরু হয়।
“কাটে না সময় যখন আর কিছুতে
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না
জানালার গ্রীলটাতে ঠেকাই মাথা
মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না
আয় খুকু আয়….”
আমরা যখন হেমন্তের এই গানটা শুনি তখন নিজের অজান্তেই মন কেঁদে উঠে বাবার বুকে সেই ছোট্ট বেলার মতো পরম নিশ্চিন্তে মুখ লুকোবার জন্য। কেননা সন্তানের জন্য মায়ের যেমন ভালোবাসা অফুরন্ত তেমনি বাবার ভালোবাসাও অফুরন্ত। পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে বাবা মানে একটা আদর্শ, প্রথম হাত ধরে চলতে শেখা, বাবার তুলনা বাবা নিজেই। বাবা শাশ্বত, চির আপন এবং চিরন্তন।
ধারণা করা হয়ে থাকে, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালন করা হয়। অপরদিকে ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক ভদ্রমহিলা ছিলেন যার মাথায় আসে ব্যাপারটা যখন তিনি গির্জার এক পুরোহিত মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিলেন। তিনি তখন ভাবেন যে, বাবারাও অনেক কিছু করেন সন্তানের জন্য। তবে কেন বাবাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে এতো কৃপণতা ! ডড তার পিতাকে খুব ভালোবাসতেন। এরপর তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর অর্থাৎ ১৯ জুন ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। প্রথম দিকে সেভাবে সারা মেলেনি বাবা দিবস পালনে বরং প্রথমদিকে তা সকলের কাছে হাস্যকরই ছিল। সময়ের সাথে সাথে তা সকলের কাছেই গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠে। ১৯১৩ সালে আমেরিকার পার্লামেন্টে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি বিল উত্থাপিত হয়। এরপর ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
করোনা মিডেল এ্যাড
এই তো গেল বাবা দিবসের ইতিহাস। এবার আসা যাক সন্তানের কাছে বাবা কী? বাবা শব্দটার মধ্যেই যেন জড়িয়ে আছে হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দিশা। আমাদের জীবনে বাবা বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে যান- যিনি কখনো কঠোর , কখনো কোমল আর কখনো স্নেহ ভালোবাসায় সন্তানকে আগলে রাখেন। শুধু আদর ভালোবাসা বা শাসন নয় বরং বাবা তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে তার সন্তানকে বড় করে তোলেন। বাবার কথা ভাবলেই চোখে ভেসে উঠে অক্লান্ত পরিশ্রমী একজন মানুষ যিনি সারা জীবন সকল বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখেন সন্তানকে। অনেক সমস্যায় পড়েও সন্তানকে হাসি মুখে দূরে সরিয়ে রাখেন সেই সমস্যাগুলোর জটিলতা থেকে। সমাজের যত নোংরামি থেকে যেমন রক্ষা করার আপ্রাণ প্রয়াস থাকে তাঁর তেমনি ভালো কাজে প্রথম উৎসাহও আসে বাবার কাছ থেকে। বাবা হলেন নারিকেলের মতো, উপরে শক্ত অথচ ভেতরটা তাঁর সাদা কোমল নরম এবং মিষ্ট যা দায়িত্ব ও কর্তব্যের মূর্ত প্রতীক।
বাবা দিবস পালনে দেশ ভেদে দেখা যায় ভিন্নতা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়ে থাকে বাবা দিবস। দিনটি পালনে সন্তানেরা বাবাকে তাঁর পছন্দের উপহার দিতে খুব ভালোবাসে। আর বাবারাও সন্তানের কাছ থেকে উপহার পেয়ে খুব আনোন্দিত হন। অধিকাংশ দেশে ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাদের কার্ড, ফুল কিংবা কেক উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বাবা দিবসের উপহার হিসেবে আরও প্রচলিত আছে বাবা দিবসের মগ, টি-শার্ট, বই ইত্যাদি।
আমাদের দেশে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, বড় হবার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। আমরা ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও তা খুব সহজে প্রকাশ করি না । মায়ের সাথে যদিওবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। কিন্তু বাবার সাথে বন্ধুত্ব খুব কম সন্তানেরই হয়ে উঠে। কেন এই দূরত্ব থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষটির সাথে? আসুন সব জড়তা কাটিয়ে একটি দিন না হয় বাবার আনন্দের জন্য কিছু করি। কিছু না হোক নিজে হাতে একটি কার্ড তৈরি করে বাবাকে দিয়ে বলি – বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসি । দেখুন বাবার মুখের প্রাঞ্জল হাসি, যে হাসি সত্যি অমূল্য এবং তুলনাহীন। বাবা দিবসে এটাই আশা করছি পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের কাছে যে ‘বাবা’ শুধু একটা শব্দ নয় বরং হয়ে উঠুক সহজ- সাবলীল বন্ধুত্বপূর্ণ একটি নিরাপদ আশ্রয় ।