নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, নির্বাচন হতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীতে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
‘২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ নিরপেক্ষ নির্বাচন’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা জানে দেশে যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাতে তারা ৩০টি আসনও পাবে না। এ কারণে তারা সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন এমনকি গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিজের চেহারার দিকে দেখুন। খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যখনই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, বাঁকা পথে আসেননি।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আপনারা মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে আঁতাত করেই এখনও বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি করছেন। এটা এ দেশের জনগণ জানে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ। এখনো সময় আছে মানুষের ভাষাগুলো পড়েন। দেয়ালের লিখন দেখেন। দেখে এই নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করে সরে যান। জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে দিন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আবার চেষ্টা করছে আবার তারা ক্ষমতায় আসবে। ওই ধরনের একটা নির্বাচন দিয়ে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তার মধ্যে আবার ইভিএম চালু করছে। এটা হলো, আরেকটা বড় হাতিয়ার; কী করে ভোট চুরি করা যায়। কী করে ভোট না পেয়েও নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়। সেই ইভিএম তারা দিয়েছেন।’
প্রধান নিবার্চন কমিশনারের (সিইসি) সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মজার কথা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনার হুদা সাহেব যিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুরো ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনিও বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত।’
সিইসিকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাওয়ার সময় হয়েছে তো। এখন তো আগের মতো প্রোটেকশন পাবে না। আবার কিছুদিন আগে তিনি রাশিয়াতে গিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি দেখে এসেছেন। ওটা আরো মজার জিনিস। একই লোক বারবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছে বারবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে-ওটা দেখে আসছেন উনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১ অক্টোবর ছিল একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সর্বশেষ নির্বাচন। সেটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করেছিল। জনগণ সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল, ভোট দিয়েছিল। ভোটারেরা নির্ভয়ে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়েছিলেন। আমরা এই দিনটা এজন্য পালন করছি।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ মির্জা ফখরুল বলেন বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া কোনো গণঅভ্যুত্থান ছাড়া এই দানবকে সরানো যাবে না। এই দানবকে সরাতে হলে আমাদের সমস্ত জনগণকে, সব রাজনীতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।’
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।