দেশে নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে নেটফ্লিক্স, হইচই, বায়োস্কোপ, বিঞ্জের মতো দেশি-বিদেশি ডিজিটাল ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটগুলো। সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অবাধে চলছে আপত্তিকর কনটেন্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হলেও তা যে সময়সাপেক্ষ সে ইঙ্গিত পাওয়া যায় কর্তা ব্যক্তিদের কথায়।
নেটফ্লিক্স, হইচই, অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টার, জি-ফাইভ, আইফ্লিক্স, বায়োস্কোপ, বিঞ্জ, টফি ও বঙ্গ, এগুলোকে বলা হয় ডিজিটাল ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট। টাকা দিয়ে কিংবা টাকা ছাড়া নানা রকম কনটেন্ট উপভোগ করা যায় এসব সাইটে। কোনটির আবার কিছু কনটেন্ট টাকা দিয়ে দেখতে হয়, বাকিগুলো ফ্রি। যেগুলো ফ্রি দেখা যায় সেগুলো বিজ্ঞাপনে ঠাসা।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এসব প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে অন্য দেশে নিয়মনীতি মেনে ওটিটি অর্থাৎ ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম চললেও বাংলাদেশে চলছে নীতমালা ছাড়াই। ফলাফল ভয়াবহ। কনটেন্টে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, অশ্লীলতা প্রধান অনুষঙ্গ। আর সরকার এক টাকাও রাজস্ব পায় না।
২০১৯ সালে আগস্ট ১৪, বুমেরাং ও সদরঘাটের টাইগার ওয়েব সিরিজের অশ্লীলতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বিষয়টি গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। তারপরও শিল্পের মোড়কে অশ্লীলতা চলছে। সম্প্রতি হইচই এর হ্যালো ওয়েব সিরিজের প্রমোর উত্তেজক দৃশ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আইনি কাঠামো না থাকায় এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না, বিটিআরসি বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
এই বিষয় নিয়ে সিআইডি এর বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, “অনলাইনের মুভি বা কন্টেন্টকে আমরা ধরে নেই এগুলো পর্নোগ্রাফি আইনের মাঝে পড়ে। তারা বলতে পারে যে কন্টেন্ট বানানো হয়েছে তা অশ্লীলের মাঝে পড়ে না।”
একই বিষয় নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা পর্নোগ্রাফি আইন নিয়মিত ভাবে প্রয়োগ করলে, পুলিশ শুধু এ কাজে অনেক ব্যস্ত হয়ে যাবে। এই কারণে এ বিষয় নিয়ে একটি সম্পূর্ণ নীতিমালা প্রয়োজন।”
নেটফ্লিক্স বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রয় মৈত্র বলেন, “সরকারকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। এটিকে কোনও আইনের আওতায় আনা যায় কী-না।”
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক কোনও রূপ দিতে গেলে সেটির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি থাকতে হবে। তবে হাইকোর্ট দ্রুত নীতি-মালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন।”
সবশেষ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) মিজান উল আলম বলেন, বিভিন্ন মতের মতামত আসতেছে। এর জন্য একটু দেরি হচ্ছে।
তবে নীতিমালা যে বহু-দূর তা কমিটি প্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট। সময় যত গড়াবে ততই রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার আর ওয়েব সিরিজের অশ্লীলতায় বুঁদ হবে যুব সমাজ।