জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তার। আর এই ভালোবাসা থেকেই রোজা রাখেন, স্থানীয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেন। এমনকি জাতীয় শোক দিবসে গরু জবাই করে আপ্যায়ন করেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। তিনি মো. আব্দুল মান্নান (৬৮)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ননে মান্নানের বাড়ি। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে বাড়ির একাংশে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। এই বঙ্গবন্ধু প্রেমীর শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করবেন এবং তার তৈরি করা স্মৃতি জাদুঘরটি সরকারের নিকট হস্তান্তর করবেন।
আব্দুল মান্নানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাড়িতে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর। তবুও সেই বাড়িতে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। বিভিন্ন সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছবিও রয়েছে সেখানে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর দৈনিক বিবরণীর বই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায়ই বিভিন্ন লোকজন জাদুঘরটি দেখার জন্য তার বাড়িতে আসেন।
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাড়িতে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন আব্দুল মান্নান।
তিনি জানান, ১৯৫২ সালে সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে জন্ম হয় তার। পরে সেখান থেকে পাশের অষ্টগ্রামে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় টগবগে যুবক ছিলেন তিনি। অষ্টগ্রাম এলাকায় নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় কাজ করেছেন।
১৯৬৮ থেকে আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দলের পেছনে বিরামহীন পরিশ্রমের জন্য অনেকে তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করতেন। ২০০০ সালে তার বসবাসের ঘরটি দুর্বৃত্তরা পুড়িয়েও দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি দল ক্ষমতায় আসার পর প্রায়ই দলটির নেতাকর্মীরা কটু কথা বলতেন তাকে।
আব্দুল মান্নান আরও জানান, তার দুঃসময়ে এলাকার কোনো বঙ্গবন্ধু প্রেমী তাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেননি। তীব্র ক্ষোভ নিয়ে অষ্টগ্রাম এলাকা ত্যাগ করে ফের পাশের গ্রাম বুধল ইউনিয়নের উত্তর নন্দনপুরে গিয়ে মহাসড়কের এক পাশে একটি বাড়ি করে সেখানে আশ্রয় নেন। মোট ৭ শতাংশের ওই বাড়িটিতে জরাজীর্ণ দুটি টিন-শেডের ঘর রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে বছর তিনেক আগে একটি ঘর পেয়েছেন তিনি। তবে সেই ঘরটি নিজের বা পরিবারের জন্য ব্যবহার না করে তা বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। আর সেই জাদুঘরটি ইতোমধ্যে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে গ্রামে।
আব্দুল মান্নানের মেজো ছেলে মোসলেম মিয়া (৩০) আরটিভি নিউজকে বলেন, ছোট থেকে দেখে আসছি আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রাণ দিয়ে কাজ করছেন আব্বা।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ১৯৯২ থেকে তাকে চিনি আমি। সে দলের জন্য কাজ করেন সবসময়। যেখানেই আওয়ামী লীগ সেখানেই আব্দুল মান্নান।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মো. আবুল কাসেম শের আলী বলেন, মান্নান বঙ্গবন্ধুর নামে রোজা রাখেন, নামাজ পড়েন। এই বৃদ্ধ মানুষটির শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সাথে একবার দেখা করা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারলে অনেক খুশি হবেন তিনি। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী হিসেবে আমরাও অনেক খুশি হব। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমাদের সকলের দাবি, জীবনের শেষ ইচ্ছা যেন পূরণ করা হয় তার।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মান্নান প্রায় নন্দনপুর এলাকা থেকে ৮/১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আওয়ামী লীগের মিটিং মিছলে অংশ নেয়। এই বৃদ্ধ বয়সে পায়ে হেঁটে সভায় যোগ দেয়ার জন্য তাকে সভা-সমাবেশে আসতে নিষেধও করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। অসুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন এমপি। তারপরও মান্নান শহরের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেয়।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য তিনি জীবন বাজি রাখতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। তার আর্থিক অবস্থা আগে ভালো ছিল। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর নামে বিভিন্ন দিবসে কোরবানি দিতেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর জন্য নামাজ রোজা করতেন, এখনো রাখছেন। আব্দুল মান্নানের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
তিনি আরও জানান, তারা সকলে দলের পক্ষ থেকে চেষ্টা করবেন যেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন আব্দুল মান্নান।
উল্লেখ্য, আব্দুল মান্নান এক সময় মুদি মালের ব্যবসায়ী ছিলেন। স্ত্রী রওশনারা বেগম এবং তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। মেয়েদের আগে বিয়ে দিয়েছেন এবং তিন ছেলে এলাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবনযাপন করছেন।