অনলাইন ডেস্ক
সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শনে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ফাঁকিবাজি রোধে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) পদ্ধতি চালু করছে সরকার। এর ফলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পরিদর্শন শেষে অনলাইনে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। বিদ্যালয়ে না গিয়ে অফিস কিংবা বাড়িতে বসে সফটওয়্যার খুললে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রতিবেদন আপলোড হবে না।
এর মূল লক্ষ্য প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন কর্মসূচি আরও জোরদার করা। এতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সশরীরে গিয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদন করতে হবে। এ প্রতিবেদন সচিব থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সব স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মুহূর্তেই পেয়ে যাবেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারে বেশ কিছু দুর্বলতা আছে। একাডেমিক দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়ার মতো সমস্যাগুলো সফটওয়্যারে আসেনি। এর মধ্যে স্কুলের ভাঙা দেয়াল মেরামত, ভাঙা গাছ অপসারণ ইত্যাদি উপেক্ষিত আছে। একজন শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, সফটওয়্যারে ‘অপশনাল’ নামে একটি লিঙ্ক আছে। কিন্তু কোনো ইনপুট সেখানে দেয়া যায় না।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেকেই পরিদর্শনে গিয়ে উৎকোচ নেন। এক্ষেত্রে ‘মোটরসাইকেলের তেল’, ‘দুপুরের খাবার’, ‘খরচা’সহ নানা নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। এছাড়া বেতন ছাড়ানো, যোগদান, বদলিসহ বিভিন্ন কাজে অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ আছে। আছে স্কুল উন্নয়নে বছরে এককালীন বরাদ্দ স্লিপের অর্থে ভাগ বসানো, নিুমানের শিখন ম্যাটেরিয়াল কিনে দেয়া, প্রশ্নপত্র বিক্রি বাণিজ্যসহ শিক্ষা অফিসকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজে ঘুষ ও অর্থ লোপাটের মতো অভিযোগ। অসৎ কর্মকর্তাদের এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে উপ-পরিচালক পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটবদ্ধ। অভিযোগ দিলেও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকার মেলে না। কিছুদিন আগে পটুয়াখালীর একটি উপজেলায় এক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (তখন ভারপ্রাপ্ত টিইও) বিরুদ্ধে প্যানেল শিক্ষক যোগদানের কাজে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। তখন শাস্তি হিসেবে ওই কর্মকর্তাকে শুধু বদলি করা হয়। সম্প্রতি ওই কর্মকর্তা পদোন্নতি নিয়ে একই কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন। এভাবে সমাপনী পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি, নম্বর টেম্পারিংসহ নানা অপরাধ করেও অনেকে লঘুদণ্ডে পার পাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পরিদর্শনে এক সময়ে ৫শ’ টাকা ভাতা দেয়া হতো। সেটা ছয়গুণ বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুতরাং তেল বা অন্য কিছুর নামে অর্থ নেয়া দূরের কথা, স্কুলে গিয়ে চা খাওয়াও নিষিদ্ধ। যার বিরুদ্ধে পরিদর্শনের নামে অর্থ নেয়া বা অন্য কোনো কাজে ঘুষ গ্রহণ কিংবা সরকারি অর্থ লোপাট বা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনে ডিজিটালকরণে প্রবর্তিত ই-মনিটরিং ব্যবস্থা চালুতে সহায়তা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ। নতুন বছরের পয়লা দিন থেকেই দেশের ৫০৭টি উপজেলায় এ পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার তিন ধাপে পরীক্ষা করা হয়। এজন্য প্রথমে ২০১৫ সালে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের ৫টি উপজেলায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আরও দু’ধাপে ১৩০টি উপজেলায় ই-মনিটরিং ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর সফটওয়্যার চূড়ান্ত করা হয়। তবে আজকের কর্মশালায় পাওয়া পরামর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজনে সফটওয়্যারটি আরও সংশোধন করা হবে বলে জানান সচিব আকরাম আল হোসেন।
সচিব বলেন, ই-মনিটরিং সফলভাবে প্রয়োগের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ক্লাস্টার অনুযায়ী ৩ হাজার ৭২০টি ট্যাব কিনে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ই-মনিটরিং সিস্টেমে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা স্মার্টফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে বিদ্যালয় পর্যবেক্ষণের তাৎক্ষণিক তথ্য (রিয়েল টাইম ডাটা) আপলোড করবেন। ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপ-পরিচালকসহ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সচিব ও মন্ত্রী দেখতে পারবেন স্কুলভিত্তিক প্রতিবেদন।
এ বিষয়ে মহাপরিচালক ড. কামাল বলেন, ই-মনিটরিং কর্মকর্তাদের সময় ও পেপার ওয়ার্ক কমিয়ে দেবে। এ কারণে আমরা এর নাম দিয়েছি পেপারলেস মনিটরিং। এর মাধ্যমে অগ্রাধিকার শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
শিক্ষা বিভাগের কর্মক্ষমতা, নিরীক্ষণ এবং কার্যকরভাবে কোনো নির্দিষ্ট কাজের ফলাফল মূল্যায়ন সম্ভব হবে