৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যা বিরাজ করছে। ফলে রোগীরা হাসপাতাল থেকে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালের এক দিকে যেমন জনবল সংকট রয়েছে অপর দিকে প্রবেশ মুখেই বেসরকারী হাসপাতালের দালালদের দৌরাত্ম্য। দালালদের দৌরাত্মের কারণে রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের তারা বলে, এখানকার যন্ত্রপাতি নষ্ট, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল ভুল আসবে, রোগীকে নিয়ে চলে আসেন, বেসরকারী হাসপাতালে, সেখানে সব সময় চিকিৎসক থাকেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করা হয়। এসব দালালদের সাথে হাসপাতালের কয়েকজন অসাধু ডাক্তারের সখ্যতা রয়েছে বলে ও অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের ভোগান্তি ও তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানির চিত্র। এ হাসপাতালে চিকিৎসকদের কনসালটেন্ট,মেডিকেল অফিসার ও প্যাথলজিষ্ট সহ ৩২টি পদের মধ্যে ৯টি পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। এ কারণে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে ৫শ’ গজের আওতায় কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালের নিয়ম না থাকলেও হাসপাতালের প্রবেশ গেইটের ১০ গজের মধ্যে রয়েছে মনোয়ারা ডায়াগনিষ্টক সেন্টার,ডা: আব্দুল হাই ফাউন্ডেশন ও মহিউদ্দিন ডেন্টাল ক্লিনিকসহ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক।
হাসপাতালের ২য় ও ৩য় শ্রেণি পদে ৫৮টি পদ খালি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সাব সেন্টারে ৪র্থ শ্রেনীর ২৬টি পদের মধ্যে ১৩টি পদ শুন্য রয়েছে। গাইনী কনসালট্যান্টের একটি পদ দীর্ঘ দিন থেকে শূণ্য রয়েছে। ফলে মহিলাদের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ্যানেসথেসিয়া না থাকায় অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর।
নতুন এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্সরে করা যাচ্ছে না। আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার কোন মেশিন নেই। এতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রোগীদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বলা হয়।
৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১জন করে ডাক্তার থাকার কথা। অথচ কেবল মাত্র রঘুনাথপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার আছে। পাথৈর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তার অনুপস্থিত রয়েছে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল থেকে। আশরাফপুর ও উপজেলা সদরের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে।
৮ টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৮ জন সহকারী সার্জনের মধ্যে ১ জন ও নেই। দোয়াটি ও রঘুনাথপুর কেন্দ্রে সহকারী সার্জন ছাড়া ও উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই।
জনবল সংকট ছাড়া ও ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের পূর্বের ৩১ শয্যার হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় নাইট ডিউটি ডক্টরের রুমের ছাঁদ ও দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ছাঁদের আস্তর খসে পড়ে মরিচা ধরা রড ভেসে উঠেছে। একটু খানি বৃষ্টি হলে ছাঁদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। ফলে এ কক্ষটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী।
২০ শয্যার নতুন সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের ১০/১১ বছর অতিবাহিত হতে না হতেই ছাঁদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে। দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না করায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার গুলোর জরাজীর্ন অবস্থা। কোন কোন কোয়ার্টার বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়া সত্বে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মচারীরা বসবাস করছে।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালাহ উদ্দীন মাহমুদ জনবল সংকট ও হাসপাতালে দালালদের দৌরাতত্মের কথা স্বীকার করে জানান, কোনো ভাবে এ দালাল হঠানো যাচ্ছে না। তবে জনবল সংকট সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে ।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো. সাখাওয়াত উল্যাহ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শুন্য পদ গুলো পুরনের জন্য মন্ত্রনালয়ে বারবার চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি সহসায় কনসালটেন্ট সহ অন্যান্য পদের শূণ্যতা পূরণ হবে।