সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান তিনি। টানা তিনদিনের ধারাবাহিকতায় সকাল থেকে নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বসেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, দলের প্রতীক নৌকা যারা পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছে, যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের দলের কোনো পদে রাখা হবে না। সম্মেলনে সময় সবাইকে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলে যোগদানের বিষয়ে অনেকের কথা এসেছে। এদেশে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের আছে। সে হিসেবে দলে যোগদান করানোর খুব বেশি প্রয়োজন নেই। তারপরও যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আস্থাশীল হয়ে, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় সামিল হতে কোনো ব্যক্তি বা নেতা আসতে চায় সেক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিকতার অভিযোগ নেই, যার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের কোনো অভিযোগ বা সম্পৃক্ততা নেই, শিক্ষিত, সজ্জন, সমাজে এরকম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়ে যোগদান করানো যেতে পারে। একজনের ইচ্ছে হল কাউকে এনে যোগদান করালাম সেটার কোনো সুযোগ নেই।
জুলাইয়ে সদস্য সংগ্রহ শেষে আগস্টে শুধুই শোক দিবসের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ওয়ার্ড পর্যায় ও নভেম্বর মাসে থানা ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়ে এসব কমিটি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের রাখা যাবেনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে, বিশেষ করে দলের প্রতীক নৌকা যারা পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে যারা সরাসরি নির্বাচন করেছে তাদের কোনো পদে রাখা যাবে না। কমিটিগুলো যখন হবে এটাকে মাথায় রাখবেন।
তিনি বলেন, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করার পরে মহানগর সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি শেষ হলে, আমাদের দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একটা শিডিউল নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরে সম্মেলন করব। সম্মেলন করার সময় আমাদের আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ হয়ে গেছেন, শারীরিক সক্ষমতা কম, চলাচলের অসুবিধা হয় এরকম শ্রদ্ধেয় নেতানেত্রী তাদের হয়ত আমরা আরেকটু উপরের দিকে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ইত্যাদি সহযোগী সংগঠন করে যাদের বয়স ইতোমধ্যে ৪০-৫০ পার হয়ে গেছে তাদের আমাদের দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্বে আনতে পারি। দরকার নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সবসময় শক্তিশালী। চট্টগ্রামই সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে মনে করি। এখানে সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নেতাকর্মীরা অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। এই শক্তিশালী সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে আরও আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতেও যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলার যদি প্রয়োজন হয় অতীতের মতই চট্টগ্রাম থেকেই সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীরা আস্থার প্রতিফলন ঘটাবেন, চট্টগ্রাম থেকেই সেটার নেতৃত্ব দেবে।
দ্বিতীয় দিনের মতবিনিময় সভায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেন। এরপর বিকেল সোয়া তিনটা থেকে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত সহ-সভাপতিরা বৈঠকে অংশ নেন। প্রতিটি বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনও ছিলেন।