খামচি দিয়েছে! লেগেছে কোথায়? লেগেছে কার? স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে জানালেন, তল্লাশিকারী অতিরিক্ত সচিবকে খামচি দিয়েছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। আসলেই কি রোজিনা খামচি দিয়েছে না খামচি খেয়েছে? সচিবালয়ের কক্ষে আটক রোজিনার উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের যেসব ভিডিও এপর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে, তার কোনটাতে দেখা যায়নি রোজিনা কাউকে আক্রমণ করেছে বা করেছে। তাকে কোণার সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তার ব্যাগ টানাটানি চলছে, তার ফোন কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তার গলা চেপে ধরা হচ্ছে। চলছে তার সাথে দুর্ব্যবহার। আর এই কাজ করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তৃতীয় শ্রেণীর কতিপয় কর্মচারী।
এ বিষয়ে সাংবাদিক প্রশ্ন করলে, মন্ত্রীমশাই বলছে আমি তো ওখানে ছিলাম না, খোঁজ নিয়ে দেখি, তদন্ত করে দেখি উনাকে কেউ হেনস্থা করলে তার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সেদিন ওখানে না থাকলেও এবার মন্ত্রীমশাই শিওর হয়ে বলছেন, রোজিনা বিনা অনুমতিতে ওই রুমে প্রবেশ করেছে, নথি চুরি করেছে, ছবি তুলেছে। মন্ত্রীমশাই আবার ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছে, সে বিনা অনুমতিতে রুমে ঢুকেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উনি বললেন, উনার সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের ঘটে যাওয়া এই ঘটনা কোন প্রতিহিংসামূলক আচরণ নয়।
মন্ত্রীমশাই মাস্কে মুখ ঢাকা থাকলেও আপনার কথায় আচরণে বিদ্বেষ,রাগ, প্রতিহিংসা, জিঘাংসা ফুটে উঠেছিল। আপনার নরম মোলায়েম আওয়াজ আপনার প্রতিহিংসামূলক মনোভাব ঢাকতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মন্ত্রীজি, আপনি ঠিক বলেছেন, রোজিনা ইসলাম খামচি দিয়েছে। কিন্তু সে খামচি আপনার স্বাস্থ্য সচিবালয়ের স্টাফকে নয় দিয়েছে আপনাকে। হাত দিয়ে নয়, খামচি দিয়েছে রিপোর্ট দিয়ে আপনার হৃদপিণ্ড বরাবর। প্রতিশোধ তো নিচ্ছেনই, আপনার মন্ত্রণালয়ে একেরপর এক ঘটে যাওয়া দুর্নীতির খবর যতটা সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম করেছে, তাতে বহু আগেই আপনার মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। আপনি ও আপনার মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চক্ষুলজ্জা, ভয়, অপরাধবোধ নেই বলেই প্রতিয়মান হয়।
আপনি অফিস করেন না, আপনি রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তির বিষয়টি জানতে না বলে দাবী করলেন, অমনি রোজিনা রিপোর্ট করে দিল আপনার উপস্থিতেতেই লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি হয়েছে। আপনার তখন খামচিই লেগেছে। আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে বসে আছেন এদিকে অফিস করেন না এই রিপোর্ট দিলো আরেকটা খামচি আপনার কলিজায়। বেশি পিছনে যাবার দরকার নেই, কষ্ট করে গত দুই বছরে আপনার মন্ত্রণালয়ের যত দুর্নীতির রিপোর্ট করেছে, সেগুলি আপনার ও আপনার মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বারবার খামচি দিয়েছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতি আপনার তো ব্যক্তিগত আক্রোশই জন্ম নিয়েছে। আপনার মন্ত্রণালয়ের সংগঠিত দুর্নীতির দায় আপনারই, কারণ আপনার আদেশ ছাড়া সেখানে একটা পাতা নড়ে না।
এবার বলেন গোপন চুক্তির কথা, মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিনের আনার বদলে কী দেবার চুক্তি করেছেন, যা প্রকাশিত হলে চায়না-রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ছেদ করবে, বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। কী আছে ওই নথিতে। রাশিয়া, চীনের কি বাংলাদেশে পারমাণবিক বোমা ফ্যাক্টরি খুলবে নাকি ওদের বাতিল নিম্নমানের টিকা কিনছে বাংলাদেশ? নাকি অধিকদামে নিম্নমানের ভ্যাকসিন এনে বাংলাদেশের জনগণের উপর টেস্ট ড্রাইভ করবেন? উত্তর দেবার দায় আপনার, প্রশ্ন করার ও জবাব চাওয়ার অধিকার আমাদের, জনগণের। রোজিনা ইসলাম কি এমন গোপন নথি পেয়েছে যা তিন দেশের সাথে সার্বভৌমত্ব জড়িত!
করোনা মিডেল এ্যাড
এবার বলেন, এত গোপনীয় ফাইল সচিবের পিএসের টেবিলে পরে ছিল কেন? পিএস মানে জানেন তো? পার্সোনাল সেক্রেটারি। আর সচিবের রুমে ঢোকার আগে গেস্টরা পিএসের রুমেই বসে অপেক্ষা করে। তার মানে হচ্ছে পিএসের রুমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত। সচিবলয় বিট করার সময় আমিও বিভিন্ন সময়ে পিএসের রুমে বসে অপক্ষা করেছি, দেখেছি, সচিবের সাথে সাক্ষাতপ্রার্থীরা সেখানে অপেক্ষা করেন। তাহলে এমন একটা রুমে এতো গোপনীয় ফাইল কেন পরে থাকবে? মন্ত্রীমশাই আপনি নিজেও জানেন বোঝেন যে অন্যায়টা আপনাদের তারপরও আপনাদের লজ্জিত হবার বদলে প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসায় জর্জরিত করছেন রোজিনা ইসলামকে। সে এমন একজন সাংবাদিক যে সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়ে ঘটে চলা দুর্নীতিকাণ্ড দেশের মানুষ ও সরকারকে রিপোর্টের মাধ্যমে জানিয়েছে। আপনার ও আপনার মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি রোজিনা ইসলামের প্রতি অন্যায় বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে হেয় করছে। রোজিনা ইসলাম বিশ্বের সাংবাদিক মহলে সুপরিচিত নাম। তার প্রতি আপনার মন্ত্রণালয়ের করা অন্যায় কে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে, সরকার রোজিনা ইসলামকে মুখোমুখি দাড় করে মাঝখান থেকে মজা নিচ্ছেন আপনারা। রোজিনা ইসলামকে যত দেরিতে জামিন দেবেন তত বেশি দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। আপনার প্রতিহিংসার দায় সরকার কেন ভোগ করবে?
আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবার পর একের পর দুর্নীতি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর কয়টির সঠিক তদন্ত করেছেন, বিচার করেছেন, শাস্তি দিয়েছেন, প্রতিকার করেছেন। মন্ত্রীমশাই আয়নায় মুখ দেখেন তো নাকি আয়নার সামনে চোখেমুখে মাস্ক লাগিয়ে দাঁড়ান!? এত্তো মিন মিন করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, শুনেই মনে হচ্ছিল গাল টিপে বলি: ওল্লে ওল্লে কি সুইট করে মিথ্যে বলে মন্ত্রীমশাই।
একজন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আপনারসহ অনেক মন্ত্রণালয়ের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এক রোজিনার ভয়ে কাঁপছেন, আর তাই তাকে ফাঁদ পেতে ধরতে হয়েছে, যখন ঈদের ছুটির দুদিন পর মানুষের আনাগোনা তেমন একটা শুরু হয়নি, কর্মকর্তা কর্মচারীরাও সবাই কাজে যোগ দেয়নি। ফাঁকা ফাঁকা সচিবালয়ে ফাঁদ পাতা সহজ। সাত পাঁচ না ভেবে ফাঁদে পরল রোজিনা ইসলাম। সাংবাদিক রোজিনার কাছে থেকে জব্দ জিনিসের মধ্যে আপনার সেই বিখ্যাত গোপনীয় নথি নেই কেন, জনাব মন্ত্রী মশায় জব্দ তালিকাটা একবার দেখে নেন,
১. জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অ্যাম্বেসেডর কর্তৃক প্রেরিত ডি.ও (২ পাতা)
২. কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের পক্ষে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের জন্য পরিচালক সিএমএসডি প্রেরিত পত্র (৫৬ পাতা)।
৩. সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপ (২পাতা)।
৪. করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্ত মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির অনুমোদন সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ (২পাতা)।
৫. রোজিনা ইসলামের দুটি মোবাইল ফোন
৬. রোজিনা ইসলামের দুটি পরিচয়পত্র।।
নাটক সাজানোর জন্য ৬ ঘণ্টা নিলেন। তাকে হেনস্তা করে মুচলেকা দেয়াতে চাইলেন। তাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করলেন, সব কিছুই তো প্রতিশোধ নিতে। গাজন সেবনের পর প্রসবকৃত আপনাদের নাটকে গাজার নৌকা পাহাড় ডিঙ্গায়। দেশের সাধারণ মানুষের মনে আপনাদের জন্য ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু নেই। জনবিচ্ছিন, জনঅহিতকর আপনারা। আপনাদের জন্য করুনা হয়, দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তাদের অর্থ মেরে খান, জনগণের হক মেরে দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। জনগণ কেন আপনাদের সম্মান করবে বা ভালবাসবে? আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার চোখে আপনারা অপরাধী। আপনাদের কর্মকাণ্ড আজীবন আপনাদেরকে অপরাধী করেই রাখবে। আপনারা গাছেরটা শুধু না, তলারটা না, মাঝেরটা না, পুরো গাছটাই খেয়ে ফেলেন।
এক রোজিনা ইসলাম আপনাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে, আপনাদের হিংস্র চেহারা বের হয়ে গেছে। রোজিনার পিছনে আপনারা উঠে পরে লেগেছেন। তাকে দমাতে পারলে আপনাদের লুঠের পথ আরো সুগম হবে। দেশটাকে চুষে খেয়ে ছিবড়ে করে ফেলতে আর কোন বাধা থাকবে না তাই কি? রোজিনার এতদিনের অর্জনকে নষ্ট করতে আপনারা বিদেশী রাষ্ট্রের স্পাই বানাবেন, তাকে দেশের তথ্য বিদেশে পাচারকারী বানাবেন, দারুণ মেধা আপনাদের। রোজিনাকে এখনো যে প্রাণে মেরে ফেলেননি এই তো অনেক বড় পাওয়া আমাদের। আপনাদের মুখের সামনে টাকার বস্তা নিয়ে ছুঁড়ে দিলে আপনারা রোজিনাকে আটকাতেনই না বরং ওকে এক দুই ঘণ্টার মধ্যে জামিন দিয়ে দিতেন, কোর্টেও যাওয়া লাগতো না। উদাহরণ শিকদার গ্রুপের ছেলে রণ হক যে মাত্র ৫ ঘন্টায় জামিন পেল। কারণ ওরা টাকার বান্ডিলের পাহাড় ছুঁড়ে দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের ছেলেরা খুন করুক, রেপ করুক, ব্যবসার জন্য দেশের ক্ষতি করুক সমস্যা নেই। তারা মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে থাকবে। এই দেশে থাকতে হলে, আপনাদের মত করাপ্ট, অবৈধ টাকা-সম্পদ, ক্ষমতা থাকতে হবে না হলে যে কোন সময়ে যে কাউকে আপনারা মেরে ফেলবেন, গুম করবেন। রোজিনা ইসলাম এতো অপরাধী যে, তাকে আটকাতে জমিনের আদেশ দেবেন কিনা তার সিদ্ধান্ত নিতে আর দুইদিন লাগবে। কিন্তু খুনে, ডাকাত, লুটেরা ধর্ষক, সন্ত্রাসীদের জামিন আগামই হয়ে যায়, সাবাস! সাবাস বাংলাদেশের প্রশাসন।
মন্ত্রীমশাই, রোজিনার করা রিপোর্টের বারবার দেয়া খামচির আঘাতে জর্জরিত আপনি ও আপনার মন্ত্রণালয়। তাই যেভাবে পারেন আটকাবেন রোজিনাকে। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবেন একজন সাহসী, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিককে। আপনাদের নীতিহীনতা, ভ্রষ্টাচার ও লুটেরা মনোভাব ১৯৭১ এর পাকিস্তানীহানাদের বাহিনীর ছিল কিনা সন্দেহ, পাকিস্তানীরা বাঙ্গালিদের অত্যাচার করেছে। আপনারা করছেন নিজের মানুষের উপর। রোজিনা ইসলাম কারাগারে বন্দি, আমরা আপনাদের দুর্নীতি মিথ্যাচারের খাঁচায় বন্দী। আপনার অন্যায়ের দায় সরকার বা রোজিনা ইসলাম ভুগবে কেন? তাদের মুখোমুখি করে দিলেই কি আপনার অপরাধ মাফ হয়ে যাবে?