চাঁদপুর হাইমচরের মেঘনা পাড়ে বিনিয়োগ করলেই ব্যাপক পর্যটনের অপার সম্ভাবনার আশা দেখা যাচ্ছে। দেশের পর্যটন পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকা শুরু করেছেন এখানকার স্থানীয়রা।
হাইমচর উপজেলা ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে চারটি ইউনিয়ন মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড় অর্থাৎ চরাঞ্চল। মেঘনার পূর্ব পাড়ে রয়েছে আরো চারটি ইউনিয়ন। এর মধ্যে আলগী উত্তর ইউনিয়নের কাটাখালি থেকে দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রাম পর্যন্ত মেঘনা নদীর পাড়টি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য অনেক সম্ভাবনাময় স্থান।
শুধুমাত্র একটি মেরিন ড্রাইভ, খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারলে কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের। বিনিয়োগের জন্যও আগ্রহ তৈরি হবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনার পাড়ে চরভাঙা এলাকায় ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে স্কাউটের বার্ষিক জাতীয় অনুষ্ঠান ‘কমডেকা’ যোগদিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী মেঘনার পাড়ে দুই কিলোমিটারের চাইতে একটু বেশি সড়ক মেরিন ড্রাইভ আকারে ইট দিয়ে তৈরি করেন।
তবে গত তিন বছরে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি ও ঢেউয়ের কারণে ওই সড়কটির এখন বেহাল দশা। ওই সময় সড়ক তৈরি করে স্টিলের রেলিং দেয়ায় কিছু মানুষ ভ্রমণ করতে আসতে শুরু করেন। তখনই এই স্থানটি নজরে আসে ভ্রমণ পিপাসুদের।
চরভাঙা গ্রামের মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, শাকিল নামে স্থানীয় এক যুবক নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি ছাতা ও চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে তিনি একটি চটপটির দোকান দিয়েছেন। বিকালে স্থানীয় বিভিন্ন বয়সী এলাকার লোকজন এখন আসতে শুরু করেছেন এবং বিকালের সময়টা এখানে বসে কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনা পাড়ের চরভাঙা এলাকা সফর করার সময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন এবং চরাঞ্চলকে অর্থনৈতিক জোন করার ঘোষণা দিয়ে যান। অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজ এগিয়ে চলছে। তবে পর্যটন এলাকা করার জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগের বিষয়ে আমরা জানতে পারিনি।
কাটাখালি এলাকার বাসিন্দা শোয়েবুল মিয়া ও আসলাম মিয়াজী বলেন, মেঘনা পাড়ের এই বৈচিত্রময় দৃশ্য যেকোন মানুষের মন কাড়ে। দিনের বেলায় একরকম, বিকালে সূর্যাস্তের সময় আরেক দৃশ্য ধারণ হয় মেঘনা পাড়ে। রাতের বেলা জোৎস্না থাকলে নদীর পাড় থেকে উঠে আসতেও মন চাইবে না পর্যটকদের।
তারা বলেন, কাটাখালি থেকে চরভাঙা পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার। এই স্থানটিতে মেঘনা পাড়ে মেরিন ড্রাইভ করা হলে খুবই চমৎকার হবে। কারণ এসব এলাকায় প্রবেশ করার জন্য বহু সংযুক্ত সড়ক এখন পাকা হয়েছে এবং এখানে বহু পানের বোরজ ও শুপারির বাগান রয়েছে। এসব দৃশ্যও খুবই মনোরম। সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থা যারা এগিয়ে আসবে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই লাভজনক হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতিসহ বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
উপজেলার মহজমপুর গ্রামের সমাজকর্মী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মেঘনা পাড়ের মৎস্য আড়ৎগুলোতে বছরে কম-বেশি ইলিশসহ নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পর্যটন এলাকা গড়ে তুললে আগত ভ্রমণ পিপাসুরা তাজা মাছের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। এখন শুধুমাত্র পরিকল্পনা করে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পর্যটন এলাকা করার পরিকল্পনা করেই আমরা প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক মেঘনার পাড়ে ইট দিয়ে পাকা করেছি। কিন্তু পানির স্রোত ও মেঘনার ঢেউ সড়কটি ভেঙে গেছে। পর্যটন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং সে আলোকে কাজ করছি। মেঘনা পাড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে দেশের যেকোন স্থানের মানুষ এখানে এসে খুবই চমৎকার সময় কাটাতে পারবেন।