রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ধোঁয়া তুলে থাইল্যান্ডে আরও একবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী। এর আগেও ডজন খানেক সেনা অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশটির জনগণ। তবে এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন স্থিতিশীলতা আসেনি, বদলায়নি জনগণের নিয়তিও। তাই এবারের অভ্যুত্থান ভালো কোনো ফল বয়ে আনতে পারে—এমন আশায় বুক বাঁধতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনে
থাইল্যান্ডে বর্তমানে যে বিভেদের রাজনীতি বিরাজ করছে, এর মধ্যে বহু রাজনৈতিক দল ও মতের উপস্থিতি থাকলেও মূলত এর একদিকে অবস্থান করছে থাকসিন সিনাওয়াত্রার পরিবারের সমর্থক, যাঁদের বেশির ভাগই গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী? অন্যদিকে রয়েছে শহরের মধ্যবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণি, যারা রাজপরিবারের অনুগত? ফলে থাকসিন শিবির ও রাজপরিবার—এ দুই শিবিরে স্পষ্ট বিভক্ত থাইল্যান্ডের রাজনীতি।
এ দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব, শহুরে মধ্যবিত্ত-অভিজাত শ্রেণির স্বার্থ এবং সাধারণ মানুষের অসন্তোষ—এ তিনটি বিষয় থাইল্যান্ডের অস্থিতিশীল রাজনীতির প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৩২ সালে ‘খাঁটি’ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলেও আইনের মাধ্যমে রাজার সিংহাসন এবং তাঁর ক্ষমতা রক্ষার বিষয়টি সিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, থাইল্যান্ডে সরকার পরিচালনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রিভি কাউন্সিলের (থাই রাজপরিবারের উপদেষ্টা দল) প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রয়েছে।
এদিকে দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ওপর থাকসিন পরিবারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন থাকসিন। এ কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ সিনাওয়াত্রার পরিবারের গুণমুগ্ধ সমর্থক।
তবে থাকসিন ক্ষমতাকে যথেচ্ছ অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ আহরণের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি খ্যাপিয়ে তোলেন শহুরে মধ্যবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণিকে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রবল জনরোষ গড়ে তোলার সক্ষমতা ছিল না ওই শ্রেণির প্রতিনিধিদের। তাই প্রিভি কাউন্সিলের প্ররোচনায় সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে থাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র আঁটতে হয় তাঁদের। ফলে ২০০৬ সালের রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। অন্যদিকে সিনাওয়াত্রাদের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে জন্ম নেয় থাকসিনপন্থী ‘রেড শার্ট’।
২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে আবারও জয়লাভ করে পিউ থাই পার্টি। ক্ষমতায় আসেন থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা।