আমার কণ্ঠ রিপোট
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের পূর্ব কাজিরগাঁ গ্রামে ঈদগাঁ’র নামে স্বামীর শেষ সম্বল মাঠের দুই শতাংশ সম্পত্তি না দেয়ায় এক বয়স্ক বিধবাকে এক বছর ধরে সমাজে সামাজিক সকল কর্মকান্ড থেকে একঘরে করে রেখেছে গ্রাম্য মাতাব্বররা। যা আদিম যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
জানা যায়, গত ১৯ বছর ধরে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে স্বামীর ভিটে মাটিতে আঁকড়ে আছে বিধবা রৌশনআরা। পুরনো টিনে আবদ্ধ জোড়াতালি দেয়া ঘর ভিটে আর বাড়ীর পাশে দুই শতাংশ সম্পত্তি ছাড়া কিছু নেই। এই দুই শতাংশ সম্পত্তি গত এক বছর ধরে স্থানীয় একটি চক্র ঈদগাঁ’র নাম করে বালি ভরাট করে দখল করে। প্রতিবাদ করলে বাড়ী ও সমাজ ছাড়ার হুমকি দিয়ে আসছে তারা। এ বছর কোরবানীর পর্যন্ত দিতে দেয়নি এ বিধবা পরিবারটিকে। বর্তমান সময়ে মধ্যযোগীয় নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে এ বিধবার বর্ণনা শুনে। তিনি জানেন না অথচ ঈদগাঁয়ের নামে স্বামীর রাখা দুই শতাংশ কৃষি জমিটুকুও নাকি রেজিষ্টি করে নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁ প্রধানীয়া বাড়ীর মৃত আবুল বাশারের স্ত্রী রৌশনআরার দুই শতাংশ ভূমি কাজিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাথে রয়েছে। উক্ত স্থানে গত এক বছর ধরে ৮ শতাংশ জায়গার উপর ঈদগাঁ স্থাপনের নামে বালু ভরাট করে রেখেছে স্থানীয় একটি দালাল চক্র। উক্ত ঈদগাঁ মধ্যবর্তী স্থানে বিধবার দুই শতাংশ ভূমি রয়েছে। কিন্তু ঈদগাঁ নিয়ম অনুযায়ী ওয়াকফ্ হিসেবে বিধবার সাথে কোন অর্থ না দিয়ে বিধবার দুই শতাংশ সম্পত্তি তার দেবর আব্দুল মালেকের ছেলে মো. সুজন স্থানীয় একটি চক্রের কাছে বিক্রয় করে দেয়। অথচ এ বিষয়ে বিধবা রৌশনআরা কিছুই জানেন না বা তার কাছ থেকে কোন টিপ সই নেওয়া হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে বিধবা তার সম্পত্তির কাছে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।
গত রমজান মাসে বিধবার ছেলে বিল্লাল হোসেনকে স্থানীয় চক্রের সদস্য প্রধানীয়া বাড়ীর আমানউল্ল্যার ছেলে আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন মিলে এলোপাতারী মারধর করে এবং বিধবা মহিলাকে হুমকি-ধমকি দেয় ‘যদি জায়গা না দিস তাহলে তোদেরকে ঘর-বাড়ি এমনকি সমাজ ছাড়া করা হবে’। তারই পেেিত গত ঈদুল আযহায় কোরবানী পর্যন্ত দিতে পারেননি বিধবা পরিবারটি।
এ বিষয়ে বিধবা রৌশনআরা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ১৯ বছর পূর্বে। সন্তানদের নিয়ে বিপাকে রয়েছি। ঈদগাঁ’র নাম করে একটি চক্র জোরপূর্বক আমার জায়গা দখল করে রেখেছে। আমাকে হুমকি দিচ্ছে যদি জায়গার কাছে আসি তাহলে নাকি জানে মেরে ফেলবে। এভাবে গালাগালি, হুমকি-ধমকি দিয়ে আমার কাছ থেকে সম্পত্তি কেড়ে নিতে পারবে না। আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করি যেন তদন্তপূর্বক মাতাব্বর আর ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে এগিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ২০১৬ সালের রমজান মাসের সময় কাজিরগাঁ ঈদগাঁ স্থাপনে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন এবিষয়ে থানা পুলিশ একাধিকবার এলাকার লোকদের সাথে বসেও সমাধানে আসতে পারেনি। বিধবার সম্পত্তি রয়েছে সত্য, কিন্তু কিভাবে তা দখল করে নিয়েছে তা আমরা বলতে পারবো না।
কাজিরগাঁও ঈদগাঁ কমিটির সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু বলেন, বিধবা রৌশনআরার দেবরের ছেলে সুজনসহ তাদের ওয়ারিশগন উক্ত যায়গা বিক্রয় করে টাকা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক মেম্বারসহ গন্যমান্যরা অবগত আছে।
হাজীগঞ্জ ৫নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম মীর বলেন, কখন কোথায় কে বা কারা ঈদগাঁও বা মসজিদ স্থাপন করে তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। আর এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কোন প থেকে যদি লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে বিষয়টি নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।