বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশ সে স্বপ্ন দেখার সাহস যেন হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে তবে মানবিকতা আর মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ছে সমাজ। এখন চারদিকে দূর্নীতিবাজ ক্ষমতাধরদের জয়জয়কার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে টুটি চেপে ধরে অন্যায়কারীরা। যার প্রমান হলো সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর নির্যাতনের ছবি। যে ছবি গন ও সামাজিক মাধ্যমে সারা সময় ধরে মানুষ দেখছে তা অবলীলায় অস্বীকার করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশেকে দুর্নীতি মুক্ত করার কথা বলা হয় সব সময় ।তবে দূর্নীতি মুক্ত কিভাবে হবে তা কেউ বলে না। বরং দুর্নীতির খবর প্রকাশ হলে হেনস্তা হয়ে যেতে হয় জেলে।এরপরে ও কি বলতে হবে, ‘ ভালো আছে বাংলাদেশ। ‘
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এ দেশের প্রেক্ষাপটে অচল।কারন এখানে সত্য বলা যায় না। সত্যের গভীরে যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করে রেখেছে কিছু অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা কালে কালে। আর এদের ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী যে সরকার বদল হলেও তারা থাকে অনড়। কারন দেশের চালিকাশক্তি যে আমলা নামধারী তারাই।সরকারের কাঁধে ভর করে এরা কেবল রং পাল্টায় সময় ও সুযোগ বুঝে।
একজন সাংবাদিক খবরের সন্ধানে নানা পন্থা অবলম্বন করে। কখনো সোর্স ব্যবহার করে। আবার নিজেও ঘটনার অন্তরালের ঘটনা জানে এবং প্রমাণ জোগাড় করে নিজস্ব কায়দায়। আর এসব পন্থায় যদি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দোষী বলা হয়,তবে সকল সাংবাদিককে একই মামলায় জেলে দিয়ে দেয়া উচিত। কারণ সাংবাদিকদের চার চোখ খোলা রেখে তথ্য সংগ্রহ করার ঘটনা সবার আছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি আর স্পর্ধা কোথায় পৌঁছছে তা সরকারকে ভাবতে হবে।কারন সকল কিছুর জবাবদিহিতা দিনশেষে সরকারকেই দিতে হবে।
সাধারণভাবেই বুঝা যায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার দূর্নীতির খবর নিজে থেকে দেয় না। সংবাদ মাধ্যমেই দেশ ও জনগন জানতে পারে সরকার ও প্রশাসনের ভালো মন্দ।কিন্তু বর্তমান অবস্থায় মনে হচ্ছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক কেবলমাত্র আজ্ঞাবহ হয়ে খবর প্রচার করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
করোনা মিডেল এ্যাড
একজন নির্ভীক সাহসী সাংবাদিক দেশের জন্য কতটা প্রয়োজন তা বুঝার সময় এসেছে।কেননা সব কিছু নষ্টের দখলে এখন।আমলাদের হাতে জিম্মি মানুষ ও সরকার। তারা বালিশ পর্দা কেনা থেকে বিদেশ ভ্রমনের নামে কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি করছে। কোভিড -১৯ এর কালে তাদের দূর্নীতি কতটা সীমাহীন ছিল তা সবাই দেখেছে। অথচ সব জেনেও মানুষকে চুপ থাকতে হবে। কারণ তাদের হাতে ক্ষমতার লাটাই।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে তথ্য চুরি অভিযোগ আনা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এ মুহুর্তে খুব জানা দরকার কি এমন গোপন তথ্য চুরি করেছে রোজিনা যা প্রকাশ পেলে দেশের ক্ষতি হবে। রোজিনা ইসলাম এ যাবতকালে যত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা থেকে সরকার ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শুনা যায়নি। বরং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতিকে সে নজরে এনেছে সরকার ও জনগণের। তবে এটা ঠিক তার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দূর্নীতিবাজরা বেকায়দায় পড়ছে বলেই আজ তাকে মিথ্যাভাবে জেলে পাঠিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। আর এ ঘটনা যে দীর্ঘ সময়ে ক্ষোভের প্রতিফলন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম।সে গণমাধ্যমকে যখন সরকার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে তখন জনগন শংকিত হয়। কলমকে বন্ধ করে দেয়ার এ অপচেষ্টা করতে গিয়ে ভুলে গেলে চলবে একজন সাহসী নির্ভীক সাংবাদিক একদিনে তৈরি হয় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি অনুসরণ করার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন।দুঃখজনক হলো দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে কিংবা কলম ধরলে জীবনে আসে হুমকি ধামকি বা মামলা।
মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পেরেয়ি গেছে কিন্তু দেশের মানুষের মুক্তি মেলেনি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়।শাসক আর শোষনের গল্পটা এখন কেবল বদলেছে। অন্যায় করে দূর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যায় বলে এদেশে বিচার হয়নি সাংবাদিক কাজলকে নির্যাতনের।ফাইল বন্দী হয়ে প্রতিবেদনের শুধু তারিখ বদল হয় সাগর রুনী হত্যা মামলার। আর সে খাতায় নতুন করে যোগ হল আর একটি নাম ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ‘
লোভাতুর শকুনরা সময়ের ব্যবধানে এদেশকে কেবল ব্যবহার করছে তাদের সম্পদের পাহাড় গড়তে।সেখানে সত্য কথন প্রকাশকে চলমান রাখতে হলে রোজিনাকে হারতে দেয়া যাবে না।কারন রোজিনা হেরে গেলে অন্যায়কারী দূর্নীতিবাজরা ধবংস করবে সোনার বাংলার স্বপ্নকে। অতএব একটা কলমকে রুদ্ধ করার চেষ্টা হলে শত কলমের কালিতে লিখতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তা না হলে বাংলাদেশ বন্দী হবে কিছু দুর্নীতিবাজ নষ্ট মানুষদের হাতে।