বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এখন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবরের মতো এবারও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা অব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সেলিমা রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আমরা ইতিহাস ভুলে যাচ্ছি। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। জিয়াউর রহমানকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টাকারীরা স্বাধীনতার শত্রু। গণতন্ত্র ও রাজনীতিবিহীন এদেশে আজ ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে ধারণ করেছে। কোনো অপশক্তির জোরে কখনোই তাকে মুছে ফেলা যাবে না। যারা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে তারা ভেবেছিল, জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের আদর্শকে ধ্বংস করে দেয়া যাবে। কিন্তু ৩৩ বছর পর এখনও কোটি মানুষের হৃদয়ে জিয়াউর রহমান স্থান করে আছেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখনও জাতীয়তাবাদবিরোধীরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আজ তিনি জাতীয়তাবাদবিরোধী শক্তির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সময় নষ্ট না করে অতিদ্রুত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করলে জনগণই সরকারকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে।
বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অংশ। রেডিও-টেলিভিশনে ক্রমাগত মিথ্যাচার করা হচ্ছে। যারা এখন দেশ শাসন করছেন, তারা জিয়াকে কলঙ্কিত করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা করছেন। তারা জিয়ার নন, স্বাধীনতার শত্রু। তিনি বলেন, আমাদের আশপাশে যত রাষ্ট্র আছে তাদের সবার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে হবে। হতাশ হলে চলবে না। দেশের স্বার্থে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে জিয়া কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কথা বলছেন না, ভয় পাচ্ছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, একটি দল এক ব্যক্তিকে দিয়ে করা যায় না। একটা দর্শন থাকতে হয়। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের দর্শন ছিল না। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই দর্শন দিলেন। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন দিলেন। গোটা জাতি তা গ্রহণ করল। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই এই দর্শন মেনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার দর্শন সারা পৃথিবীর মানুষ গ্রহণ করেছে। বিএনপির নেতাদের জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন ও দুর্নীতি-সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, তাহলে ক্ষমতায় গেলে আপনাদের কেউ নামাতে পারবে না। জিয়াকে নিয়ে অহঙ্কার করুন। যারা জিয়াকে কলঙ্কিত করছে, তাদের ভয় করবেন না। বরং কৃপা করুন।
এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমান এবং আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। জিয়া না চাইলে শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারতেন না। দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, রাজনীতি নেই। দেশে ভয়ানক অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে একটা বিরাট শূন্যতা। এই শূন্যতার কারণে দেশে অরাজকতা বাড়বে। যেখানে রাজনীতি থাকে না সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের মতো আরও ঘটনা সংঘটিত হবে।
এমকে আনোয়ার বলেন, জিয়াউর রহমানের স্মৃতি সবার অন্তরে। তাই শত চেষ্টা করেও তার স্মৃতি মুছে ফেলা যাবে না। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি যদি এত জনপ্রিয় হয়ে থাকেন তবে বাংলাদেশের যে কোনো আসনে নির্বাচনে দাঁড়ান। সেখানে আপনার সঙ্গে আমাদের ছাত্রদলের কেউ একজন দাঁড়ালে তখন দেখা যাবে কে জনপ্রিয়।
জামায়াতের মিছিলে গুলির প্রতিবাদ : বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি এই নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সব বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে এখন আরও বেপরোয়া ও নৃশংস হয়ে উঠেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল বুধবার মতিঝিলে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে। এতে প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া মিছিল থেকে ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।