আমার কণ্ঠ রিপোর্ট
‘মা টাকা দেন, আমাকে বাঁচান’ মুঠোফোনে ছেলেদের আকুতি। দেড় মাস আগে পরিবারকে না বলে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন বাংলাদেশী দুই চাচাত ভাই। তারা হলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের ঝাকনী পাটওয়ারী বাড়ির মৃত লুৎফুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান জসিম (২৭) ও ফারুক হোসেন পাটওয়ারীর ছেলে আল-আমিন (২০)।
এক মাস নিখোঁজের পর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি ফোনের মাধ্যমে এই দুই বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় মানবপাচার চক্রের কাছে জিম্মি রয়েছেন বলে নিশ্চিত হয় পরিবার। পরে ১০ মার্চ থানায় তাদের পক্ষে চাচা আবুল বাসার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মিজান ও আল-আমিন ২ ফেব্র“য়ারি দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বহু খোঁজাখুঁজির পর কোনো সন্ধান মেলেনি। মার্চের প্রথম সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে তাদের চাচা আবু তাহের পাটওয়ারীর মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে একটি বিকাশ নম্বর দেয় চক্রের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট চাওয়া হয়। তারপর মালয়েশিয়া থেকে ওই নম্বরে ৭ মার্চ ইসলামী ব্যাংকের একটি এ্যাকাউন্ড নম্বর দেয়। চট্টগ্রামের পটিয়া শাখার ইসলামী ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বরটি ৩৩২৬৬। এ্যাকাউন্ট হোল্ডার আল-আমিন ইসলামের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বদরপুর গ্রামের আবদুল মান্নান খানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম আদালতের একটি বিশেষ শাখায় কর্মরর্ত
থানা সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে পটিয়া শাখায় যোগাযোগ করে ওই আল-আমিন ইসলামকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তিনি ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে মামলাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিআইডির সহযোগিতা নিয়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও প্রয়োজনী তথ্যাদি সংগ্রহ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঝাকনী পাটওয়ারী বাড়ির মিজান ও আল-আমিন চাচাত ভাই। তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। মিজানের মা ও স্ত্রীসহ এক সন্তান রয়েছে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অন্যদিকে আল-আমিন সবে এইচএসসি পাস করেছেন। অনার্সে ভতির প্রস্তুতি চলছিল। বাবা কৃষিকাজ করে ছেলের লেখাপড়া চালিয়েছেন।
মিজানুর রহমানের মা রৌশন আরা বলেন, ‘আমার ছেলেদের ওরা মারধর করতেছে, মোবাইলে শুধু কান্নার আওয়াজ হুনছি। ছেলে কইছে, ‘মা, টাকা দেন, আমাকে বাঁচান। হেরা প্রথমে ৫ লাখ টাকা চেয়েছে, পরে দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ চাইতাছে।’
আল-আমিনের মা সালেহা বেগম বলেন, ‘মামলা করার পর এখন আর ফোন করতেছে না। তাদের ওই নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম জানান, ‘ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বরটিকে পুঁজি করেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে।’
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনিটরিং করছে।’