শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট নির্বাচন সামনে রেখে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। ভোটের দিন সারাদেশে নৈরাজ্য সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও নিজেরাই একটি ভুয়া বুথ তৈরি করে নকল ভিডিও বানিয়েও গুজব সৃষ্টি করতে পারে। এসব করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি ভোটারদের মাঝে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা। প্রায় ১১ হাজার ৫০৬ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হবে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পাবে আওয়ামী লীগ।
নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, এবারের নির্বাচনের ভোট কেবল শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের জন্য নয়, গোটা বাংলাদেশ এবং এর উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
নৌকার পক্ষে ‘অভূতপূর্ব গণজোয়ারের’ পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যমগুলোতে আসা প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে— জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিসি, টাইম ম্যাগাজিন, নিউইয়র্ক টাইমস, ব্লুমবার্গ ও হিন্দুস্থান টাইমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংস্থা ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশের জনগণ আবারও নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মানুষের সেবা করার সুযোগ দেবে, ইনশাআল্লাহ।’
এইচ টি ইমাম বলেন, এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে স্বাধীনতায় অর্জিত সংবিধানের আলোকে। নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন তার পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করছে। তবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত বিএনপি-জামায়াত ভাবধারার নয়টি বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার ৬ হাজার ৫৮৫ জন সারাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন। এসব পর্যবেক্ষক পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, অন্য সব বারের তুলনায় এবার অনেক কম সহিংসতা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সচেতন তৎপরতায় তা সম্ভব হয়েছে। তবে এই সহিংসতার শিকার কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এইচ টি ইমাম বলেন, সারাদেশে নৌকার পক্ষে অভূতপূর্ব গণজোয়ার দেখে বিএনপি জোট ভোট বানচালের চেষ্টা চালাতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি নোয়াখালীতে নির্বাচন বানচাল করার কিছু সরঞ্জাম পুলিশ জব্ধ করেছে। সেখানে স্থানীয় বিএনপি প্রার্থী মওদুদ আহমদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আগাম অভিযোগপত্র প্রিন্ট করে রেখেছেন। সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি আপত্তিজনক এবং আইন ও সংবিধান পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা ‘ব্যালট বাক্স আগে থেকেই জাল ভোটে পূর্ণ করে রাখার’ অভিযোগকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেননা ব্যালট বাক্সগুলো নির্বাচন কমিশন থেকে সশস্ত্রবাহিনীর প্রহরায় তারা নিয়ে যাচ্ছেন। যেখান থেকে নেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমাদের যাতায়াত দূরের কথা, প্রবেশাধিকারই নেই। কারা, কোথায় পাঠাচ্ছেন, কীভাবে পাঠাচ্ছেন, সেটা আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। তাছাড়া স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তো পোলিং এজেন্টদের ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই হবে। দায়িত্বশীলরা যেন ভোটের আগেই ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার খতিয়ে দেখেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাবেক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবির কাউসার, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।