চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শিশু (১০) বলাৎকারের অভিযোগে নাছির উদ্দিন নামে এক কওমি মাদরাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নাছির উদ্দিন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ছোট বেওলা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। এই শিক্ষক উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের শাহ আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসার শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তিনি একই মাদরাসার হোস্টেল সুপারের দায়িত্বে আছেন।
একই মাদরাসার আরও একাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ রয়েছে নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ৪ শিশুকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, মামলা দায়েরের পর অভিযান চালিয়ে তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি।
জানা গেছে, অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাছির দুই বছর আগে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের একই মাদরাসায় শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। এতদিন তার সন্দেহজনক বিকৃত রুচির সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে কানাঘুঁষা থাকলেও থানায় অভিযোগ দেয়ার সাহস করেনি কেউ। রুটিন করে এসব শিক্ষার্থীকে প্রতি রাতে ভয় দেখিয়ে বলাৎকার করতেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশুর মা বলেন, ছেলেকে আলেম বানানোর জন্য মাদরাসায় ভর্তি করেছিলাম, কিন্তু এসব হুজুরদের জন্য আশাটা ছেড়ে দিয়েছি।
মাদরাসার শিক্ষক দ্বারা কোমলমতি শিশু বলৎকারের ঘটনা নিয়ে আনোয়ার হোসেন শামীম সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তা নিচে তুলে ধরা হলো
“স্যার, ওরা তো খুব ছোট। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক, ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে”। ভাষ্যটি রাঙ্গুনিয়ার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিন (৩৫) এর। নিয়মিত অগনিত শিশুকে তার লালসার শিকারে পরিণত করলেও গ্রেপ্তার হবার পর আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ধর্ষিতদের প্রতি এমনই সদয় তিনি!!!
নাছিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনলে এই মায়াবাক্যকে আপনার কাছে পরিহাসই মনে হবে। মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগ নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিশু ছাত্রকেই নিয়মিত বিছানার সঙ্গী করেন তিনি। ঘটনা সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যা বের হয়ে আসে, তাতে শিউরে উঠবেন যেকোনো বিবেকবান মানুষই। ধর্ষণ করার জন্য মূলত দশ বছরের নিচে বয়সী ছেলে শিশুদেরকেই টার্গেট করতেন তিনি। কোনও শিশু তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে তাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ শিশুই এতিম/দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষপর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা ভিন্ন কোনও উপায় থাকতো না। নাছিরের ছেলেশিশু আসক্তি এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল যে, বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান।
ধর্ষিত শিশুর প্রতি সহমর্মী হবার পাশাপাশি নাছির আবার ভীষণ রকম নিয়মনিষ্ঠও। বিশৃঙ্খলা তার একদমই না পছন্দ। তাই তো তিনি একেবারে রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে কবে কখন কোন শিশু হাজির হবে। যেন সেই গল্পের অত্যাচারী সিংহের মতো, যে কিনা বনের পশুদের সাথে চুক্তি করেছিল যে, প্রতিদিন একটি করে প্রাণী খাবার হিসেবে তার নিকট চলে আসলে সে আর যার তার ওপর অত্যাচার করবে না। এই করে বেশ ভালোমতোই চলে আসছিল শিক্ষকতার আড়ালে তার বেপরোয়া বিকৃত যৌনজীবন। ছাত্ররাও মারধর, হুমকিধামকির ভয়ে নীরবে নিশ্চুপে সব সয়ে যাচ্ছিল।
ঝামেলা শুরু হয় গতকাল সন্ধ্যায়। এক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রাথমিক অভিযোগ পাবার পর আমাদের বিশদ অনুসন্ধানে উঠে আসে বলাৎকারকারী নাছিরের গোপন বিকৃত যৌনজীবনের অবিশ্বাস্য সব খতিয়ান। তারপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং মধ্যরাতে পরিচালিত আমাদের অভিযানে গ্রেপ্তার ভণ্ড হুজুর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর রীতিমতো ভোল পালটে ফেলেন তিনি। বারবার আমাদের নিকট দাবি করতে থাকেন, তিনি নাকি কাউকে জোর করে বিছানায় নিতেন না, ছাত্ররাই নাকি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গ নিতে আসতো। যদিও গরিব ঘরের অসহায় ছেলেগুলোর সাথে দিনের পর দিন কোন কৌশলে, কি কি ঘটিয়েছে নরপশু নাছির, তা আমাদের অজানা ছিল না।
সুখের বিষয় হলো, আজ সকালে আদালতে পাঠানো হলে গ্রেপ্তারকৃত নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনিত বলাৎকারের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি বলাৎকারের শিকার শিশুদের মধ্যে চারজনও আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের উপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দেয়। ইনশাআল্লাহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হবে তার। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনার শিশু ছেলে বা মেয়ে যাই হোক, তার নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় রাখুন। শিক্ষক হোক, আত্মীয় হোক কিংবা হোক প্রতিবেশী, আপনার সন্তানকে কারো অরক্ষিত শিকারে পরিণত হবার সুযোগ দিবেন না প্লিজ।