বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।
ঋণ খেলাপি-বাংলাদেশ ব্যাংক
করোনায় স্থবির হওয়া অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ঋণ পরিশোধে বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়েছে সরকার। এরপরও ঋণ পরিশোধ বাড়েনি। উল্টো ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।
তিন মাস আগে (অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক) খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
আর বছরের হিসেবে গত বছরের মার্চের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে ঋণগ্রহীতা ঋণের কিস্তি শোধ না করলেও তাকে খেলাপির তালিকায় দেখানো যাবে না- ২০২০ সালজুড়ে এমন সুবিধা পেয়েছেন ঋণ গ্রহীতারা। এছাড়া খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনে বিভিন্ন নীতিমালার শর্তে শিথিলতা আনা হয়। এতে গত এক বছরে ঋণের কিস্তি না দিয়েও নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি কোনো গ্রাহক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৪৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
করোনা মিডেল এ্যাড
বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এছাড়া বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এ অংক বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকের। মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশই খেলাপি হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬০৭ বা প্রায় ১৭ শতাংশ।
বিদেশি খাতের সব চেয়ে বেশি খেলাপি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। তাদের মোট ঋণের প্রায় ৯৮ শতাংশ বা ১৩৫৯ কোটি টাকা খেলাপি।
করোনা মহামারির কারণে খেলাপিদের জন্য বরাবরই বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর ঋণ পরিশোধ না করেও বিশেষ সুবিধায় যারা খেলাপি হননি, তাদের জন্য নতুন করে সুবিধা দিয়ে গত ২৪ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব চলমান ঋণের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, এসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নিয়মিত রাখতে হবে।
এছাড়া যেসব গ্রাহকের ২০২০ সালের সুদ বকেয়া রয়েছে তাদের চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। একইসঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তাও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। আগে চলমান ঋণের কিস্তি প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হতো। তলবি ঋণ চলতি মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। এভাবে শোধ হলে ঋণ খেলাপি করা যাবে না।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে পরিশোধের সুযোগও দেয় সরকার।