বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের গত বছরটি ভালো যায়নি। একের পর এক জেরার মুখে পড়তে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার মার্ক জাকারবার্গকে। জরিমানার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। ব্যবহারকারীর তথ্য বারবার ফাঁস হওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নতুন বছরটিও ফেসবুকের জন্য সুখকর হবে না। এ বছরে ফেসবুককে বড় ধরনের জরিমানার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন সেবা ভেঙে আলাদা হতে পারে।
২০১৯ সালে ফেসবুকে যেসব ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। সেখানে সম্ভাব্য ৬টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
১. বড় অংকের জরিমানা
ফেসবুকের অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডাল এখনো সুরাহা হয়নি। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে ‘আইরিশ ডাটা প্রটেকশন কমিশন’। গত ডিসেম্বরে ফেসবুকের মাধ্যমে দেশটির ডাটা প্রটেকশন আইন ব্যাপকভাবে ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে বড় অংকের জরিমানা করা হতে পারে।
‘ইন্টারন্যাশনার অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেসি প্রফেশনালস’ এর প্রধান কেট কলেরি বলেন, তারা (ফেসবুক) কীভাবে নিরাপত্তা লঙ্ঘন করেছে এবং এর ফলে কী ক্ষতি হয়েছে তা পরিমাপ করা হচ্ছে। এর পরে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ফেসবুককে।
২. নিয়মিত জরিমানা
২০১১ সালে ফেসবুকের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি পরীক্ষা করে দেখছে আয়ারল্যান্ড সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন। ব্যবহারকারীর তথ্য অপব্যবহার হলে বা ওই চুক্তির কোনো ধারা লঙ্ঘন করলে প্রতিবার প্রতিটি লঙ্ঘনজনিত ঘটনার জন্য ৪০ হাজার ডলার (প্রায় ৩৫ লাখ টাকা) জরিমানা করা হতে পারে। এটি নিয়মিতই চলতে পারে। এছাড়া আইনলঙ্ঘন নিয়মিত ঘটতে থাকলে প্রতিদিন একই হারে জরিমানা করা হতে পারে।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙন
নতুন বছরে ফেসবুকের সবচেয়ে বড় যে ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে; এর বিভিন্ন সেবার মধ্যে ভাঙন। বিভিন্ন দেশ ও প্রতিযোগীদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে ফেসবুক তার বিভিন্ন সেবা যেমন, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপকে ভেঙে ভাগ করে ফেলতে পারে। এজন্য ফেসবুক বিভিন্ন দেশে তৃতীয়পক্ষের সন্ধান করছে। তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফেসবুক ওইসব সেবা প্রদান করতে পারে।
৪. নিক ক্লেগের দায়িত্ব গ্রহণ
যুক্তরাজ্যের সাবেক ডেপুটি প্রধানমন্ত্যী নিক ক্লেগ ফেসবুকের হেড অব কমিউনিকেশন হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। তার এই দায়িত্ব নেয়া ফেসবুক রক্ষার চেষ্টা হিসেবেই মূল্যায়ন করছেন বিশ্লেষকরা। তবে নিকের এ বিষয়ে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় ফেসবুকের জন্য এটি কতটা মঙ্গলজনক হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
৫. নতুন আইন
ফেসবুকের বর্তমান যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীর সুরক্ষা দিতে পারছে না। ফলে নতুন বছরে নতুন করে অনেক নিয়ম চালু করা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের চাপ রয়েছে। সরকারের পরামর্শের আলোকে ওইসব নিয়ম চালু করতে হবে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ইনটেলিজেন্স কমিটি’র দ্বিতীয় প্রধান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার এ বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রস্তুত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই কৌশলপত্র অনুযায়ী ফেসবুকের নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন আনা হতে পারে।
৬. কমতে পারে ব্যবহারকারীর সংখ্যা
ফেসবুকের বর্তমান যে ব্যবহারকারী রয়েছে নতুন বছরে তা ব্যাপকহারে কমতে পারে। এমনটি জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ স্ট্রাটেজিস। গত এপ্রিল মাসে তারা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩১ ভাগ ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।