দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘুমে!
সরকারের নির্দেশ মানছে না শিকরা ॥ হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা
সরকারের ফি বই দিয়ে কিন্ডার গার্র্ডেন মালিকরা কামাচ্ছেন অর্থ॥ স্কুল-মাদ্রাসায় বিভিন্ন ফি বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শিকরা॥ অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চরম ােভ ও হতাশা। গরীর ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া লেখা ছেড়ে দিচ্ছে।
আমার কন্ঠ রিপোর্ট॥
শিা ব্যবস্থা নিয়ে এমনিই সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশা। দায়িত্ব্শীল কর্মকর্তারা অফিসে আসেন আর চলে যান। সরকারের কোন নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যে নূন্যতম দায়িত্ব না থাকার মতোই তারা কাজ করেন। শিা প্রতিষ্ঠানের শিকরা নিজের মতো করে শিা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন এবং ইচ্ছে মতোই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে উল্টে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে থাকেন শিকরা। এমনকি রাজনৈতিক নেতাদেরকে দিয়েও হুমকি দেয়া হয়। সরকার ফি বই দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। কিন্তু এ বই আটক রেখে এবং বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে হাজীগঞ্জের শিা প্রতিষ্ঠানগুলেঅ ভর্তিসহ বিভিন্ন ফি নামে চলছে অর্থ আয়ের বানিজ্য। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসা এমনকি কিন্ডারগার্টেনগুলোর সকল শিার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ও সেশন ফিসহ বিভিন্ন খাত নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার যেখানে বিনামূল্যে বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরন করছে সেখানে নতুন শ্রেনীতে উন্নীত করনের জন্য বিভিন্ন ফি‘র নামে শিার্থীদেরকে স্ব-স্ব শিা প্রতিষ্ঠানে সেশন ফি দিয়ে বই নিতে হচ্ছে। সেশন ফি প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ১২শ থেকে ২ হাজার করে নিতে দেখা গেছে। যে সকল শিার্থী সেশন ফি কম দেয় তাদেরকে বাকীটা পরে দিতে হবে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ােভের বহিপ্রকাশ ঘটতে দেখা গেছে। সেশন ফি পৌর এলাকায় ১ হাজার আর পৌর এলাকার বাইরের বিদ্যালয়গুলো ৫শ টাকা করে নেয়ার বিধান রয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিা কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে।
সরজমিনে উপজেলার হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখায় গিয়ে দেখা যায় বই বিতরণের এক হুলস্থুল কান্ড। বিদ্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েক জন অভিভাবকের সাথে কথা বলতে গেলে তারা অনেকটা ােভ প্রকাশ করে বলেন সরকার আমাদেরকে বিনা মূল্যে বই দিয়ে কি লাভ। বইয়ের টাকা না রাখলে কি হবে হাজার টাকাতো রেখে দিলো সেশন ফিসহ বিভিন্ন নামে।
একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর এক শিার্থীর কাছে সেশন ফি‘র টাকা জমার রশিদের বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিার্থী জানান, আমাকে রশিদ দেয়নি। টাকা জমা দেয়ার পরে একটি সাদা কাগুজের স্লিপ দেয়া হয়েছে , সেই স্লিপটি আরেক স্যারের কাছে জমা দিয়ে বই এনেছি।
বই নেয়ার অভিনব এই বিষয়টি দেখতে বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের নবনির্মিত নতুন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, দু‘জন শিক নীচ তলার সিড়ির রুমের পাশে দরজার সামনে টেবিলে বসে বসে শিার্থীর কাছ থেকে স্লিপ গ্রহন করেন। স্লিপটি জমা রেখে ঐ শিার্থীর স্বার একটি রেজিষ্টার থাতায় এবং স্লিপটি জমা রেখে বই সরবরাহ করছেন।
হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখার ৯ম শ্রেনীর শিার্থীরা জানান তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা সেশন ফি নেয়া হলে ও সাদা কাগুজে যে স্লিপটি দেয়া হয়েছে সেটি বই আনার রুমে রেখে দেয়া হয়েছে। ৮ম শ্রেনীর খা শাখার অপর শিার্থী জানান তার কাছ থেকে ৯শ ৬৬ টাকা সেশন ফি নামের স্যারেরা নিয়েছেন। ৭তম শ্রেনীর ৮৩৬টাকা, ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিার্থী জানান তার কাছ থেকে ৯শ ৪৬ টাকা নিয়েছে সেশন ফি‘র নামে । এই শিার্থীর রশিদটি পর্যবেন করলে দেখা যায় ভর্তি ১শ টাকা, চলিত মাসের বেতন ১শ ২০ টাকা,উন্নয়ন ৩শ টাকা,বিদ্যুৎ ২০ টাকা, সিলেবাস ২৫ টাকা, ব্যাজ ২০ টাকা,আইসিটি ৬ টাকা, বিবিধ/ওসি ৩শ টাকা মিলিয়ে মোট ৯শ ৪৬টাকা। ঠিক এই শিার্থীর মতো অন্যন্য কাসের সেশন ফি আদায় করা হচ্ছে।
অভিযোগ সম্পর্কে হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্য মোঃ আবু সাঈদ এর কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮শ শ্রেনীর শিার্থী তিন শিার্থী জানান তারা ভর্তির সময় সেশন ফি ৭শ ১২ টাকা করে দিয়েছেন।
বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক তার মেয়েকে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করাতে ৭শ ৫০ টাকা সেশন ফি ধরা হয়েছে আপাতত ৫শ টাকা জমা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীটা পরের জমা দিতে হবে।
বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পানে রয়েছে বলাখাল চন্দ্রবান বলাখাল চন্দ্রবান আদর্শ কেজি স্কুল। এই কেজি স্কুলের অভিভাবক ােভ প্রকাশ করে বলেন এই বিদ্যালয়ে বই আনার আগে সকল শিার্থীকে সেশন ফির জন্য গড়ে ৪শ টাকা করে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ৪শ টাকা দিয়ে বই এনেছি।
বাকিলা ফাজিল মাদ্রাসায় সেশন ফি‘র নামে ৮ থেকে ১২ শ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে শিার্থীরা জানান।
এ ভাবে উপজেলার প্রতিটি শিা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে মতো সরকারের ফি বই দেয়ার নাম করে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ ছাড়াও আরো কয়েকজন শিকের সাথে কথা হলে তারা বলেন ৫/৮ টাকা করে নিয়েছি বিভিন্ন ফি বাবদ। আমরা আর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেবো না।
বেশি অভিযোগ করেছেন পৌর এলাকার অভিভাবকরা। তারা বলেন পৌর এলাকার শিা প্রতিষ্ঠান সব চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে। কারণ এসকল প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলেন সরকার দলীয় বিভিন্ন ধরনে নেতারা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিা অফিসার শাহ আলী রেজা আশরাফী আমরা শিা প্রতিষ্ঠানের শিকদের সরকারের নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু শিকরা সরকারের নির্দেশ মানছেনা। অনেক অভিভাবক আমাকে ফোনে অতিরিক্ত ফি নেয়ার কথা জানিয়েছে। তার পরেও আমরা আবারো শিা প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিচ্ছি যেন সরকারের নির্দেশ মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা করা হয়।