চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে বহরিয়া নূরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটির উদ্যোগে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত গনসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুনরায় নির্বাচিত চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বহরিয়া নূরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি ডাঃ দীপু মনি অনুষ্ঠানস্থলে এলে বিদ্যালয়ের স্কাউট সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও নতুন ভবনের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে অত্র বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে গন-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসন গ্রহণ করলে তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ব্যাচ প্রদান করা হয়। এছাড়া নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মোঃ সেলিম খান ডাঃ দীপু মনিকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও মানপত্র তুলে দেন। বিশেষ অতিথি চাঁদপুর পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সংবর্ধিত ও প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনি এমপি তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, অশুভ ছায়া থেকে এ বিদ্যালয়টি মুক্ত করা হয়েছে। আশা করি আপনাদের সহযোগিতায় এটিকে যথাযথ সময়ে কলেজে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান এবং ধর্ম ভীরু মুসলমান, আমরা আমাদের ধর্ম সঠিক ভাবে পালন করি। অন্যান্য ধর্মের মানুষরাও যথাযথভাবে তাদের ধর্ম পালন করে। অথচ জামায়াত ইসলামী নামে একটি সংগঠন তারা ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা যুদ্ধাপরাধ করেছিলো যারা এ দেশের ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে তুলে দিয়েছিলো এবং তাদের সাথে থেকে ওই সকল মুক্তিকামী মানুষজনকে হত্যা করেছিল। যারা ঐ সময় এই দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছিল। এই সংগঠনটি ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইসলাম ধর্মের অপব্যাবহার করেছিল। সাধারণ ধর্ম প্রাণ মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে। তাদের কারো কারো অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ সংগঠনটির নামের মধ্যে ইসলাম আছে কাজের মধ্যে ইসলাম নেই।
ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমাদের পবিত্র কোরআনে শুদ্ধভাবে বলা আছে ধর্ম পালন কর, মনোযোগী হও, মন দিয়ে ধর্ম পালন কর, সৎ থাকতে কিন্তু ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করবেনা। তুমি যদি একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা কর, তাহলে তুমি সমস্ত মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করেছ। অথচ এই জামাতে ইসলামী আমাদের দেশে বহু মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। গত তিন মাসে পেট্রল বোমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। কাজেই এ সংগঠনটি কোনভাবেই ইসলামের সেবক হতে পারেনা।
ডাঃ দীপু মনি আরো বলেন, এ সংগঠনটি দীর্ঘদিন বিদ্যালয়টি দখলে রেখে পরিচালনার নামে অপকর্ম করার চেষ্টা করেছিল। আজকে সেই দীর্ঘদিনের অপছায়া দূর করা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং স্বনামধন্য বিদ্যাপিঠে পরিণত হবে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নব-নির্বাচিত সভাপতি মোঃ সেলিম খান এ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন, সে দাবিগুলোর প্রতি ডাঃ দীপু মনি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন সবগুলো দাবী সময়োপযোগী। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুল মাঠের পশ্চিম পাশের দেয়াল নির্মাণ করা জরুরী, পাঠদানের জন্য বর্তমানে যে ১ তলা ভবনটি রয়েছে সেটি উর্ধ্বমুখী করা প্রয়োজন। এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হলে ভাল হয়। সবগুলো দাবি পর্যায়ক্রমে সমাধান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আরশাদ মিয়াজী, চাঁদপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝি, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির খান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ মোরশেদ আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির মানপত্র পাঠ করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মুকবুল হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবু সায়েদ মাস্টার। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, শিক্ষানুরাগী আজহার উদ্দিন মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরশাদসহ আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। এ দিন গনসংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে জুমার নামাজের পর থেকেই ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে স্কুল মাঠে এসে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে এ বিশাল মাঠটি মানুষর পদচারণায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।