গ্রামের মানুষও শহরের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবে: প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে গ্রামেও শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন গ্রামে বসে সব চাহিদা পূরণ করতে পারে সে লক্ষ্যেই গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার।
আগামী প্রজন্মের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কী পেলাম, না পেলাম- সেই চিন্তা না করে আগে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়; সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে পর্যন্ত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অনেক বছর আমাদের নষ্ট হয়ে গেছে। ৭৫ থেকে ৯৬.. ২৫টা বছর হারিয়ে গেছে। এই ২৫টা বছর প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো উন্নতিই হয়নি। উন্নতি হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের ঘিরে কিছু মুষ্ঠিমেয় গোষ্ঠির। বৃহৎ জনগোষ্ঠী কিন্তু বঞ্চিত ছিল।
‘এই বঞ্চিত মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়াই কিন্তু আমাদের দায়িত্ব,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার ২৫ মিনিটের বক্তব্যে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন এবং গুণগত মান বজায় রাখার দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়।
রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা, মিল-কারখানা নির্মাণ ও স্থাপনের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীদের কাজের গুণগত মানের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কাজের গুণগত মান বজায় থাকে সেজন্য আপনারা দৃষ্টি দিয়ে থাকেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পরিকল্পনা নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিনিয়ত আমাদের যেমন ভূমিক্ষয় হয়.. নদী ভাঙনে নতুন নতুন চরও জাগে। কাজেই এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নিতে হয়।
গত সাড়ে ৯ বছরে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৫০০ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইউনিভার্সিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতির পাশাপাশি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডাবল শিফট চালু করা হয়েছে।
সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আসনসংখ্যা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত করতে প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি করে ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ওয়ার্কশপ-ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং শিক্ষক-কর্মচারির প্রায় ৭ হাজার পদ সৃষ্টির জন্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রতি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারটি সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ও ২৩টি বিশ্বমানের নতুন পলিটেকনিক স্থাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রতি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আমরা করবো। ইতিমধ্যে ১০০টির কাজ শুরু করা হয়েছে।
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সফল হয়েছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে আমরা এসডিজির বিভিন্ন অভীষ্ট অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনেও আমরা সফল হব, ইনশাআল্লাহ।
শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথাও বলেন তিনি।
২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক টেকসই, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বিশ্বব্যবস্থায় টেকনোলজিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চাহিদাসম্পন্ন। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে একমুখী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাধর্মী একটি প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতার আইডিইবি ও হিন্দুস্থান মেশিন টুলস ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে খুলনা ও যশোরে Common facility centre (CFC) for small & medium enterprises নামে Professional Training Institute স্থাপন করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে তখনই আইডিইবির উন্নয়নে অবদান রেখেছে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আইডিইবি ভবন নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেই। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে আমরা আরও প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
আইডিইবির কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদদক শামসুর রহমান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায় আইডিইবির তৈরি ‘মি. টিভেট’ নামের একটি রোবট। এ সময় রোবটটির সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টেকনিক্যাল ভোকেশনাল এডুকেশন ট্রেইনিং’। শনিবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তিনদিনের এ অনুষ্ঠানে দুটি আন্তর্জাতিক সেমিনারসহ ১৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বিশ্বের সাতটি দেশের অতিথিসহ ছয় হাজারেরও বেশি আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নেন।
এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন এক্সপোতে ৫২ বিষয়ে বিভিন্ন আবিষ্কার প্রদর্শন করা হবে।