নৌকার হ্যাটট্রিক জয়ের মিশনে নির্বাচনি প্রচারে কোনো খুঁত রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ। সব ধরনের প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করতে চায় দলটি। এ জন্য সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন করেছে।
দলীয়ভাবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পরে সব শক্তিকে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জোটের প থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয়মঞ্চ করে মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তিকে এক করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পে ভোট চাওয়া হবে। এ দিকে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো জেলা ও উপজেলায় তৈরি করেছে নির্বাচনি টিম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের প্রচার মাধ্যম সচল রাখা হয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির যতগুলো শাখা-প্রশাখা রয়েছে সবগুলোকে নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহার চায় আওয়ামী লীগ। মোট ৫টি মাধ্যমে এবার প্রচারের কাজ চালানো হবে। এগুলো হলো- প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট। নির্বাচনি প্রচারণায় এরইমধ্যে যুক্ত হয়েছেন সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও অভিনয় জগতের সেলিব্রটিরা। নির্বাচনকে ঘিরে আবহমান কাল থেকে দেশে যে প্রচার যন্ত্র রয়েছে যেমন- ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং এগুলো থাকবে। পাশাপাশি আমরা অনলাইনে যতভাবে প্রচার করা যায় তা-ও করা হচ্ছে।
দলের নেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে একটি বড় অংশ অনলাইন ব্যবহার করে। এ জন্য অনলাইনে দলের নির্বাচনি প্রচার কাজ সচল করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো অনলাইন মাধ্যমে ফিলার হিসেবে তৈরি করে দেখানো হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানান, আমরা ৫টি মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। সেই অনুসারে কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি। নির্বাচনি উপকরণগুলো আমরা এরইমধ্যে প্রার্থীদের হাতে পৌঁছানোর কাজ শুরু করেছি। তিনি আরও জানান, আমরা আগামী ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় রাজধানীর এফডিসির সামনে থেকে সেলিব্রেটিরা সমস্ত ঢাকা শহরে আওয়ামী লীগের পে প্রচারপত্র বিলি শুরু করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের উজ্জীবিত করতে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারের কাজ হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় এরইমধ্যে সরব হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলের প্রার্থীদের পে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচারের কাজ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন কেন্দ্রিক কর্মকান্ড গুছিয়ে আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু বাকি মাত্র। নির্বাচন পরিচালনায় দলের রয়েছে ১৫টি উপকমিটি। সেই উপ কমিটির সদস্যরাও তাদের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমসহ নির্বাচনের বিষয়গুলো পর্যবেণ করার ল্েয নির্বাচন পর্যবেণ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দলের নির্বাচন পরিচালনা কাজে সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রান্ত ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, আগামী ১২ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে।
এ দিকে নির্বাচনি প্রচারে জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও। আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প থেকে নির্বাচনি প্রচারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। স্ব স্ব সংগঠনের প থেকে গঠন করা হয়েছে টিম। এ জন্য সকল সংগঠনের প থেকে বর্ধিত সভাও করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক কেন্দ্র অনুসারে কমিটি করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। জেলা, থানা ও ইউনিয়নের সকল ইউনিটের মনিটরিং করা হচ্ছে সংগঠনের কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রীয় কমিটি ও তৃণমূলের সমন্বয় করা হচ্ছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংগঠনের ১৮টি টিম এরইমধ্যে ৬৪ জেলায় পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে নির্বাচনের দলের প্রার্থীদের পে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে ১৬ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশের জেলা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের পরে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে বিজয়মঞ্চ করে নৌকার প্রার্থীদের পে প্রচারণা চালানোর জন্য কাজ করছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। এখানে মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই জোটের প থেকে সারা দেশে জনসভা করার কর্মসূচিও দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতা ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচীর মধ্যে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে, ১৩, ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল,পুরান ঢাকা ও মিরপুরে ( অন্য স্থানেও হতে পারে), ১৯ ডিসেম্বর ফেনী, ২১ ডিসেম্বর কুস্টিয়া ও ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী, নওগাঁ ও গাইবান্ধায় জনসভা করবে ১৪ দলীয় জোট। সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প থেকে নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তির প্রার্থীর কাজ করা হবে।