চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বাস্তবায়নে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বিষয়ক একদিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৩ জুন বুধবার সকাল ১০টা থেকে এ প্রশিক্ষন শুরু করে দুপুর একটা পর্যন্ত চলে।
বেশীরভাগ তামাক সেবনকারী এবং তামাক গ্রহণকারীরা নিজেদের সন্তানের এ বিষয়ে সচেতন না করে বরং উৎসাহী করে তোলে। কখন দোকান থেকে কিনে আনতে কখনও তামাক সাজিয়ে দিতে বা তৈরী করে দিতে সন্তান অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সহযোগিতা নেয়। এ থেকে তারাও বিষয়টি সম্পর্কে আস্তে আস্তে উৎসাহী হয়ে উঠে। যা এক সময় গাজা, ইয়াবা হেরোইন এবং কিশোর গ্যাং পর্যন্ত পৌছে দেয়। মুল কথা তামাক দিয়েই মাদকের শুরু হয়। যেমন মোবাইল হাতে দিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস থেকে শিশু কিশোরদের মোবাইল অপরাধের সূত্রপাত হয়।
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য মানব জীবনে কি ধরনের প্রবাব ফেলে এবং এর কারনে কি কি ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতিত্বে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় তামাকের কুফল এবং এর আইনের ধারাগুলি নিয়ে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, সহকারী কমিশনার(ভূমি) শারমিন আক্তার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান তছলিম আহাম্মেদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জামান, ওসি(তদন্ত) বাহার মিয়া প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, তামাকের উপকারিতা হলো এ থেকে সরকার ট্যাক্স পায় এবং এ সেক্টরে কিছু মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে কিন্তু এর ক্ষতিকারক দিক অনেক বেশী এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তামাক সেবন এবং যে কোন মাধ্যমেই তামাক গ্রহনের মাধ্যমে মানবদেহের মাথা থেকে পা পর্যন্ত বহু রোগ বা উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন হাইপার টেনশন, ব্রেন ষ্ট্রোক, মাথা ব্যাথা, বদহজম, খুদাামন্দা, ফুসফুসে ক্যান্সার, স্বাসপ্রস্বাস জনিত রোগ, খাদ্য নালীতে আলসার ও ক্যান্সার, প্রসূতি বা অনাগত শিশুর স্বাসপ্রস্বাস জনিত রোগ, বার্জার ডিজিজ বা পা অথবা পায়ের আঙ্গুলে পচন, যার কারনে কখনও কখনও আঙ্গুল এমনকি পায়ের হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলে দিতে হয়। বিশেষ করে তামাক সেবন এবং গ্রহনের কারনে আস্তে আস্তে রক্তনালীগুরি সরু হয়ে যাবার কারনে ভয়াবহ রোগগুলি হতে পারে। তামাক সেবন এবং গ্রহন যেমন একদিনে মানুস অভ্যাস্ত হয় না তেমন একদিনে এ থেকে নিস্তার পাওয়ারও কোন সুযোগ নেই। সাবধান সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে। অভ্যাস মানুষের দাস। আস্তে আস্তে সেবন এবং গ্রহনের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
প্রথমে ১৯১৯ সালে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন হলেও ২০০৫ সালে ১৮টি ধারা দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্র আইন পনিপূর্নভাবে বাস্তবায়ন হয়। এ আইনটি স্থানীয়ভাবে কে বা কারা প্রয়োগ করবেন অর্থাৎ কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্য কি কি? ধুমপান এলাকা কেমন হবে, কোথায় করা যাবে না, পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধুমপানের শাস্তি অথবা দণ্ড, এবং তামাক নিয়ন্ত্রনে বিধি বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তামাক বিক্রি এবং সেবনে আগ্রহ বাড়ে কোন মাধ্যমেই এমন কোন বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না। তামাক বিক্রিতে প্রসার ঘটে এমন কোন বিজ্ঞাপন দিয়ে দান, ত্রান বিতরণ, বৃত্তি প্রদান বা সাহায্য সহযোগিতা করা যাবে না। কোন ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেটে লাইট, ম্যানথল, মোল্ড এগুলি লিখাও নিষেধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি দোকানে সিগারেটের প্যাকেট সাজিয়ে বিক্রি করাও অন্যায়।
সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসনের পক্সে বলা হয় আমরা আমাদের সকল নিয়ম মেনে এবং আইনের মধ্যে থেকেই এসব বিষয়ে মোবাইর কোর্ট পরিচালনা করবো।
কর্মশালায় উপজেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগন, ইউনিয়নের চেয়াম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন উপস্থিত ছিলেন।