ঢাকা: ‘আমার দেশ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নামে দায়ে করা দুদকের মামলাটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে উল্লেখ করে তার আইনজীবীরা বলেছেন, এ মামলাটি কোনো অবস্থায় চলতে পারে না। অথচ আদালত এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য্ করেছেন। আমরা আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছি। সেখানে এ মামলাটি বাতিলের আবেদন করেছি। আমাদের ওই আবেদন হাইকোর্টে বিচারাধীন। এই অবস্থায় নিম্ম আদালতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না। আমরা আশা করছি হাইকোর্টে এ মামলাটি বাতিল হয়ে যাবে।” আইনজীবীরা দাবি করেন, মাহমুদুর রহমান এমন একজন ব্যক্তি, যিনি দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন।
মাহমুদুর রহমানকে বুধবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে আনা হয়। সকাল সাড়ে দশটায় মামলার শুনানি শুরু হলে দুই পক্ষের আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীদের এ বক্তব্যের জবাবে দুদকের আইনজীবীরা বলেন, এ মামলায় সময় মঞ্জুরের কোনো সুযোগ নেই। হাইকোর্টে যে আবেদন বিচারাধীন রয়েছে, তার কোন আদেশ হয়নি। ফলে এ আদালতে শুনানি শুরু করতে ও সাক্ষ্য গ্রহণে কোনো বাধা নেই।
শুনানির শুরুতে মাহমুদুর রহমান নিজেও আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, দুদক সরকারের হয়ে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুদক জালিয়াতির মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে উপরের নির্দেশ পালন করেছে।
হাইকোর্টে বিচারাধীন আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ম আদালতে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রার্থনা জানিয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, “আপনারা আজ সরকার পক্ষে অন্যায্যভাবে লড়াই করছেন। গনেশ উল্টে গেলে আপনাদের টিকিটিও পাওয়াও যাবে না।”
দুদককে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে বিশিষ্ট নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট মাসুদ তালুকদার।
আডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “কেবল বিচার হয়েছে সেটা নয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে সেটাও যেন প্রতীয়মান হয় তা নিশ্চিত করা আদালতের দায়িত্ব।” সেটা নিশ্চিত করতে তিনি উচ্চ আদালতের শুনানি ও সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত মামলাল কার্যক্রমস্থগিত রেখে সময়ের আবেদন জানান তিনি।
উভয় পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানি শেষে বিশেষ দায়রা জজ আদলতের বিচারক বাসু দেব রায়ের আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামি ৯ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
মাহমুদুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে আরও অংশ নেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ প্রমুখ। সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।
শুনানির সময় বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীসহ আমার দেশ পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
২০১০ সালে দুদক মাহমুদুর রহমানের কাছে সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়। তিনি এ চিঠির জবাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরে দুদককে পাল্টা চিঠি দেন। পরে সম্পদের হিসাব না দেয়ার অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে ননসাবমিশন মামলা দায়ের করে।