অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এক মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী(১৭)কে একাধিকবার অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতার মা এ ঘটনায় গতকাল
মেয়েটির মা ও মামলার বাদী জানান, নির্যাতনের শিকার হওয়া তার মেয়ে ২০১৮ সালে ধিতপুর মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় ফয়সাল, জোবায়ের, ইমন ও রাসেল উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি জানার পর আমি ওই ছেলেগুলোর পরিবার, ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ও মেম্বার আবদুল কাদেরকে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ কৌশলে আমার ঘরে ঢুকে ফয়সাল ও জোবায়ের আমার ঘরে থাকা কোমল পানিয়ের সঙ্গে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে রাখে। রাতে সেই পানি খাওয়ার পর আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে রাত ২টার দিকে ফয়সাল ও জোবায়ের ঘরে ঢুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করে রাখে।’
রাতে তারা স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার ঘরে এনে তাকেও বিবস্ত্র করে আমার মেয়ের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। ঘরে থেকে যাওয়ার সময় তারা আমার আলমারি থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন ও দুটি আংটি নিয়ে যায়।’
এর কিছুদিন পর নিজের সম্মান রক্ষার্থে লক্ষ্মীপুরে আমার মেয়েকে বিয়ে দেই। আমার মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমার বাড়িতে বেড়াতে এলে গত বছরের ৫ মার্চ রাত আড়াইটার দিকে ইমন ও রাসেল ঘরে ঢুকে আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে অচেতন করে আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার তিন মাস পর রাসেলকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকার মিরপুর-২, ৭নং রোডের ৩নং গলির জান্নাত নামের এক নারীর কাছ থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। ওই তিন মাসে রাসেল আমার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করে’ বলেও দাবি করেন মামলার বাদী।
তিনি আরও জানান, ২০২০ সালের ২০ জুন রাসেল ও ইমন আবার বাড়িতে হামলা চালিয়ে পুনরায় আমার মেয়েকে ঢাকায় জান্নাতের কাছে নিয়ে যায়। পরে লোকজনের সহযোগিতায় উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এরপর বিভিন্ন সময় ইমন আমার বাড়িতে এসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার মেয়েকে আবারও অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমার মেয়ের সন্ধান চেয়ে ইমনকে জিজ্ঞাসা করলে সে মেয়েকে ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি ইমনের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আমার মেয়ের কোনো সন্ধান পাইনি। বর্তমানে মেয়েটি নিখোঁজ রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসীরা মেয়েকে মেরে ফেলতে তাকে প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। এভাবে হুমকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার একটি ছেলে বিদেশ থাকে। দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলেননি বলেও জানান।
বর্তমানে ওই ছাত্রী প্রায় দুই মাস নিখোঁজ রয়েছে। একই সঙ্গে ধর্ষণে অভিযুক্তরা নির্যাতিতার ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা লুট ও বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে চাঁদাবাজি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে হীরাপুর গ্রামের কাজী সিরাজের ছেলে ফয়সাল (২২), লেলন মিয়ার ছেলে জোবায়ের (২৩), নূর ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম ইমন (২৩) ও কামাল হোসেনের ছেলে রাসেলকে (২৬) অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে, অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফয়সাল ও সাইফুল ইসলাম ইমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান সিকদার জানান, ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেফতার করে ওই মাদরাসাছাত্রীকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।