বন্দরে মৃত্যুর আগেই কুলখানি করলেন মোসলেম প্রধান নামে অশীতিপর এক বৃদ্ধ। ১০ গ্রামের মানুষকে বাড়িতে দাওয়াত করে ভরপেট খাইয়েছেন ৮৮ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ। ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া তিনি ১০টি মসজিদের ইমামকে দিয়ে বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেন। মোনাজাত শেষে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিজে উপস্থিত হয়ে মেহমানদারি করেন।
শুক্রবার বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের কামতাল এলাকায় ভূরিভোজের ঘটনাটি ঘটে। ১০টি গ্রামের লোকের উপস্থিতিতে লোকারণ্য ও মুখরিত হয়ে ওঠে মোসলেম প্রধানের বাড়ি। অথিতিদের আপ্যায়ন ব্যয় তিনি নিজেই বহন করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, হাজী মো. মোসলেম প্রধানের বয়স ৮৮ বছর হলেও এখনো তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, এখনো তিনি সুস্থ-সবল আছেন। হেঁটে বাজারে যান, দোকানে বসে সঙ্গীদের সঙ্গে চা-পানের আড্ডা দেন নিয়মিত। এছাড়াও বাড়ি তদারকির কাজও তিনি করেন।
চার ছেলে, পাঁচ মেয়ে মোসলেম প্রধানের। স্ত্রী বেঁচে আছে। চার ছেলের সংসারে নাতি-নাতনিসহ বড় একটি পরিবার। পূত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস তার। ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে লিখে দিয়েছেন অনেক আগেই। ছেলেরাও সচ্ছল, ব্যবসা বাণিজ্য করেন সবাই।
মোসলেম প্রধানের বড় ছেলে নবীর হোসেন ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় ছেলে আলী হোসেন খোকা, তৃতীয় ছেলে নুর হোসেন ও চতুর্থ ছেলে কামাল হোসেন ব্যবসা করেন।
বৃদ্ধ মোসলেম প্রধান চট্টগ্রাম মাইজভাণ্ডার পীরের একজন মুরিদ (অনুসারী) বলে জানা গেছে।
মোসলেম প্রধান জানান, মনে ইচ্ছে ছিল, আল্লাহ যদি আমাকে অর্থশালী করে তাহলে আমি মৃত্যুর আগেই প্রতিবেশী, নিজ গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামবাসীসহ আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াব। বাড়িতে সাজসজ্জা করে প্যান্ডেল তৈরি করে আমি নিজ হাতে খাওয়াব। আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকব, শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত আল্লাহর দেখানো পথে চলব।
গ্রামবাসী জানান, পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে ৪ দিন পর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মোসলেম প্রধান মৃত্যুর আগেই নিজ গ্রামের পাড়াপ্রতিবেশীসহ আশপাশের কামতাল, মালিভিটা, দশদোনা, হালুয়াপাড়া, আড্ডা শ্যামপুর, মহজমপুর ও যোগীপাড়া, চিড়ইপাড়াসহ ১০ গ্রামের নারী-পূরুষ এবং পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁ উপজেলার আত্মীয়স্বজনসহ কয়েক হাজার মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ১৫ দিন আগে থেকেই প্রত্যেক ঘরে দাওয়াত পৌঁছে দেন মোসলেম প্রধানের চার ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে গরু জবাইসহ রান্নাবান্নার কাজ শেষ করে শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত শেষে আমন্ত্রিতদের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল ৪টায়। মৃত্যুর আগে নিজের খরচ নিজে করেছেন বলে মানুষের মুখে মুখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন মোসলেম প্রধান।