চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে এক শ্রেনীর দালাল ও প্রতারক চক্ররা কয়েক বছর যাবত গ্রাহকদেরকে নতুন সংযোগ, পিলার দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। আর অর্থ,সম্পত্তি এবং দোকানের মালিক হচ্ছেন ঐ প্রতারক ও দালাল চক্রটি।
ঘটনার বিবরণে ও অনুসন্ধান করে জানাযায়, চাঁদপুর জেলা ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলা নিয়ে ঘটিত হয় চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হাজীগঞ্জ উপজেলা পৌরসভাধীন আলীগঞ্জে। মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হলেও গত কয়েক বছর যাবত চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে একটি দালাল ও প্রতারক চক্র সংগঠিত হয়। ঐ দালাল ও প্রতারক চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলায় সংযুক্ত করা হয় বিভিন্ন দালাল ও প্রতারক বাহিনী। তাদের মাধ্যমে নতুন যে সব ঘর বাড়ী তৈরি হচ্ছে ঐসব ঘর বা বাড়ীর মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে প্রয়োজনী কাগজ পত্র তাদের থেকে সংগ্রহ করে থাকে এবং ২ হাজার বা ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওযা হয়। পরে কাগজপত্র চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে প্রতি মিটার সংযোগ বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবী করে। অনেক সময় প্রতারক চক্র সুযোগ পেলে তাদের কাছ থেকে পুরো টাকাই নিয়ে যায়। এর মধ্যে অফিসের ৩/৪ জন দুর্নীতিবাজ অফিসারকে মিল করে কয়েকটা সংযোগ দেওয়া হয়। বাকী গ্রাহকদেরকে মাসের পর মাস অপেক্ষামান রাখা হয় হয়। কোন গ্রাহক প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক ভাবে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক গ্রাহক রয়েছে যাদের এক পিলার বা দুই অথবা ৫/৭ পিলার প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে এক থেকে ৫ লাখ টাকা লাগবে বলে যোগাযোগ করে থাকে। ক›্ট্রাকের ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতারক ও দালাল চক্ররা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে দু এক টা লাইন লাগানো হলেও বাকী লাইন বছরের পর বছর আটকে থাকে। আর গ্রাহকরা যতবারই প্রতারক বা দালাল চক্রদেরকে সংযোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তাতে কোন লাভ হয় না বরং তাদেরকে কোন কথা বললে ক্ষমতার হুুমকি দেওয়া হয় বলে অনেক গ্রাহক আমার কণ্ঠকে বলেন।
এদিকে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকার পর আবারো নতুন সংযোগ দেওয়া শুরু হয়। নতুন সংযোগ চালু হওয়ার পর প্রতারক ও দালাল চক্রটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রতারক দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছে ১০/১২জন। তারা বিশেষ করে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বহুতল ভবন এবং ঘরবাড়ী নির্মাণ করতেছে তাদেরকে বিদ্যুৎ নতুন সংযোগ দিবে বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাসা বা বাড়ীতে পল্লী বিদ্যুত সমিতির কর্মকর্তাদেরকে অর্থের বিনিময় নতুন সংযোগ দিতে দেখা গেছে। আর বাকীরা এখনো পায়নি। এভাবে প্রতারক চক্র বা দলালরা হাজীগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে কয়েক কোটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারকরা হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় নিজেদের নামে সম্পত্তির মালিক হয়েছেন ও বাড়ী করেছেন। আবার অনেকে নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে করে নিয়েছেন বাজারে ইলেকট্রেশিয়ান দোকান। তাদের মাধ্যমে যারা সংযোগ নিবে তারা বিল্ডিংয়ের ওয়ারিংয়ের যত মালামাল লাগবে তাদের কাছ থেকে নিতে হবে। কিন্তু শত শত গ্রাহক ওয়ারিং করে রাখলেও কবে পাবে নতুন সংযোগ তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর সংযোগ পাওয়ার আশায় ব্যক্তিরা মাসের পর মাস তাদের পিছে পিছে ঘুরে হায়রানি শিকার হয়ে আসছে।
বহু গ্রাহক আমার কণ্ঠকে বলেন, চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকুরী করে এমনদাবী করে আমাদের বাসায় কয়েকদিন পরপরই দুই তিন জন আসে। তারা আমাদেরকে বলে আমরা আপনাদেরকে কারেন্ট এনে দিবো। প্রতি মিটারে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগবে। আপনারা অফিসে গেলে সহসাই নতুন সংযোগ পাবেন না এবং ৩০/৩৫ হাজার টাকা লাগবে। আমরা ঘুষ দিয়ে আপনাদেরকে তাড়াতাড়ি করে সংযোগ লাগিয়ে দিবো। আপনারা আগে ওয়ারিং এর কাজ শেষ করে পেলেন। ওয়ারিং এর মালামাল আমাদের দোকানে বা আমরা আপনাকে কিনে দিবো এবং ওয়ারিং করে দিবো। কিন্তু ওয়ারিং করার পর মাসের পর মাস গেলেও তারা আমাদের সংযোগ এখন পর্যন্ত দেয়নি। তারা বলেন, আমরা অনেক সময় অফিসে গিয়ে সংযোগের বিষয় খবর নিতে গেলে তাদের সাথে দেখা হলে তারা আমাদেরকে হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয় এবং বেশি বাড়া বাড়ি না করার জন্য হুমকি দিয়ে থাকে। পরে আমরা নিরুপায় হয়ে চলে আসি। আবার কেউ বলেন আমরা নিজেরা সংযোগ পাওয়ার জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছি কিন্তু মাসের পর মাস ঘরুতেছি কিন্তু কবে সংযোগ পাবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যারা টাকা দিচ্ছে তাদের সংযোগ দ্রুত হচ্ছে।
এদিকে দালাল ও প্রতারক চক্রের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা আমার কণ্ঠকে বলেন আমরা মানুষের কাছ থেকে টাকা নেই তাদেরকে সংযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসের ৪/৫ জন কর্মকর্তা রয়েছে তারা প্রতি সংযোগ বাবদ টাকা না দিলে সংযোগ অনুমোদন দেন না। এমন কি টাকা দিলে অফিসের নিয়ম ভঙ্গ করে হলেও সংযোগ দ্রুত দেওয়া হয়। তারা টাকা ছাড়া কোন সংযোগ দেন না। অফিসের অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন তারা টাকা ছাড়া কোন সংযোগ অনুমোদন করেন না। আপনারা দুনীতিবাজ অফিসারের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখেন এবং দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে এখান থেকে বদলি করার ব্যবস্থা করেন। তারা বেতন পায় কত আর মাসে সংসারসহ যাবতীয় কত টাকা খরচ করেন। আর কোন প্রভাবশালী লোক দিয়ে তবদির করলে তারা সমিতির আইন কানুন বুঝিয়ে মানুষদেরকে বিদায় করে দেন। তারা আরো বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গোপনে সংযোগ দিয়ে অফিসের কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা কোন শব্দ হয় না। তখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া বন্ধ ছিল তখনও অফিসের কর্মকর্তারা টাকার বিনিময় সংযোগ দিয়েছে। তারা আরো বলেন অফিসের ২/৩জন কে টাকা দিলে তারা অফিসসের কাজ ফাঁকি দিয়ে যে মিটারে সংযোগের টাকা পেয়েছে সে গুলো দেখি রিপোট দেন। আমরা কিছু বললে আমাদের ক্ষতি হবে।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়োগকৃত কয়েক জন ইলেকট্রিশিয়ানের সাথে কথা হলে তারা আমার কণ্ঠকে বলেন আমরা যারা সমিতির নিয়োগকৃত ইলেকট্রেশিয়ান তাদের কোন দাম নেই। দালালরাই পুরো অফিস দখল করে আছে। দালাল ও প্রতারকদের কারনে আমরা কোন কাজ পাই না। আর মানুষও দালালদের কাছে বেশি যায়। তারা টাকা দিয়ে দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা করে দেন অফিসের কর্মকর্তাদেরকে ঘুষের মাধমে। এভাবে প্রতারক ও দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু আমাদের করা কিছু নেই। তবে আমাদের স্যারেরা অফিস থেকে দালাল ও প্রতারদেকে বাহির না করলে সাধারণ মানুষ প্রতারনার শিকার হয়ে আসবে।
এ ছাড়াও পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীত্ িও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানাযায়, সমিতির কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ পাওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা দেয়া হয় সমিতির কর্মকর্তাদেরকে। আর এরই সুযোগে ঠিকাদাররা যে সকল কাজ পান তারা ঐ সবের নিমার্ন কাজে সকল মালামাল নিজেদের বাড়ীতে এনে রাখেন। আবার পরিমানের চেয়ে বেশি উত্তোলন করে অন্য জায়গায় বিক্রি করা বা কোন কোন এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কারণে ঐ এলাাকায় ২/১টা পিলার রাখা হয়। এতে গ্রাহকরা বুঝে বিদ্যুৎ লাইন যাবে। কিন্তু তা সঠিক না। এখনো অনেক ঠিকাদারের বাড়ীতে পল্লী বিদ্যুতে বহু পিলার বা ট্রান্সফার পাওয়া যাবে। কিন্তু নিয়ম হলো যে সকল এলাকায় লাইন নিমার্ণের জন্য অর্ডার করা হবে ঐ এলাকার মালামাল নির্মাণ শুরুর দিন বা আগের দিনে উত্তোলন হবে। কিন্তু তা না হয়ে হচ্ছে উল্টোটা।
চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা বলেন, নতুন সংযোগ চালু হাওয়ার পর আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহকদেরকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি। বাকীরা পর্যায়ক্রমে পাবে। তিনি বলেন আমাদেরকে অফিসের নিয়োগকৃত ১৫ থেকে ২৫ জন ইলেকট্রেশিয়ান রয়েছে। তাদের মাধমে গ্রাহকদেরকে সংযোগ নেওয়ার জন্য তাদেরকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কোন গ্রাহক যদি প্রতারক বা দালালদের মাধ্যমে নতুন সংযোগের জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত হয় তার জন্য আমরা বা চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দায়ী নয়। তারা বলেন ঠিকাদাররা যে দিন লাইন নির্মান করবে ঐদিন সমিতি থেকে মালামাল নিবে। কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তিতে মালামাল উত্তোলন করে নিজের বাড়ীতে রাখে তা আমরা খতিয়ে দেখবো।
এদিকে বর্তমানে সংযোগকৃত লাইনগুলোতে গ্রাহকরা যে পরিমান বিদ্যুতের ইউনিট খরচ করেন বাস্তবে কারেন্টবিল তার চেয়ে ্ও বেশী আসছে বলে দাবী করেন।ফলে প্রান্তিক লেভেলের জনগন কারিন্টবিলে অতিষ্ট।তারা এর প্রতিকার চায়।