মেহেদী হাসান০
এবার ৮৪০টি ইউনিয়ন পরিষদে দল মনোনীত একক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। বাকি আটটি ইউপিতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাতটিতে এবং রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার একটিতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। ইতিমধ্যে ৩১টি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হওয়ার পথে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তিন জন নেতা বলেন, দলের বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও দলে অস্বস্তি তৈরি করছে। প্রসঙ্গত, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। শতাধিক ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
জানা গেছে, এবার দলীয় হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌকার বিরোধিতা করলে পরবর্তী নির্বাচনে তার ভাগ্যে কোনো দিনই জুটবে না নৌকার টিকিট। পাবেন না দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদও। কিন্তু তারপরও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বামী ও স্ত্রী দুই জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও তার স্ত্রী ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন আক্তার। তারা একই ইউনিয়ন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিজ মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেছুর রহমান।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন। ২ নম্বর তিরনইহাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার হোসেন খোকন। ৩ নম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ইনছান আলী শ্রমিক লীগের নেতা। ৫ নম্বর বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে আট জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ কামাল। তার ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কামু। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আরও দুই জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন—বাদশা সোলাইমান এবং তারেকুজ্জামান তারেক। ৬ নম্বর ভজনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমদাদুল হক। ৭ নম্বর দেবনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সলেমান আলী এবং তরিকুল ইসলাম। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ইউপি নির্বাচনে মোট ২৪ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন। এর মধ্যে তানোরে ৯ জন আর গোদাগাড়ীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া অধিকাংশ ইউপিতে আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
এদিকে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রমাণ পেয়ে ছাত্রলীগের যে ১৩ জন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আশিক আহমেদ, কাফরুল থানা ছাত্রলীগের ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিহাদ হাসান রাজ, শরীয়তপুর সদর উপজেলা শাখার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ঢালী, লক্ষ্মীপুর জেলার ১৪ নম্বর মান্দারি ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইমুন, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিরাজ মিঠু প্রমুখ। এদের মধ্যে ঢালীকে গত বৃহস্পতিবার আর বাকি চার জনকে শনিবার অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি পাঁচ জনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এক নেতা বলেছেন, তার দুঃখ নেই। তিনি ফেসবুকে যা লিখেছেন, সেটিই তার বক্তব্য। তবে এক নেতা দুঃখ প্রকাশ করে আবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগ তার সিদ্ধান্ত পালটায়নি। অব্যাহতির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।