ঢাকা: বিএনপির নেতারা এখন পরস্পরের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। আন্দোলন সফল না হওয়ার দায়ও চাপাচ্ছেন তারা পরস্পরের আচরণ ও বক্তব্যের ওপর। বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দলের নেতাদের আদর্শ ও আন্দোলনে ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা বলেছেন, জিয়ার আদর্শ থেকে সরে যাওয়া এবং নিজেকে বাঁচিয়ে চলার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল হয়নি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। দর্শক সারিতে বসে বক্তাদের বক্তব্য শোনেন জিয়া-পত্নী।
মির্জা আব্বাস বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “জিয়াউর রহমানের আদর্শ আমাদের মধ্যে নেই। তার পরও যারা এই আদর্শ লালন করেন, তারা আজকে দলের মধ্যে কোণঠাসা। এবারের আন্দোলন জোরালো হলেও সফলতার মুখ দেখেনি। কারণ একটি ভুল ছিল। সেই ভুল খুঁজে বের হরতে হবে।” তিনি বলেন, “সঠিক সময়ে যদি বেঠিক সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে সামনের আন্দোলনও সফলতার মুখ দেখবে না। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত ও সঠিক লোক নির্বাচন করতে হবে।”
গয়েশ্বর চন্দ্রের কথা টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, “গয়েশ্বর ঠিকই বলেছে। মাপা মাপা কথা আর মাপা মাপা কাজ দিয়ে আন্দোলন সফল হবে না। আমি শুরু থেকে এই দলের সদস্য। অন্য কোনো দল থেকে আসি নাই। আপনারা অযথা বেফাঁস কথা বলে দলকে নষ্ট ও ধ্বংস করবেন না। অন্যের চরিত্র হরণ করবেন না। এতে করে নেতা হওয়া যায়, অন্য কিছু হওয়া যায় না।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাওয়ার কারণে আমাদের রাজনীতিতে এই দৈন্যদশা।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “বিএনপির নেতারা সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত। আজকে আমরা সম্পদ রক্ষার জন্য মেপে মেপে কথা বলি। হিসাব করে কর্মসূচি দেই। তাহলে শেখ হাসিনার অশালীন বক্তব্য বন্ধ হবে না। আর যদি রাজপথের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারি, তাহলেই কেবল শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।”
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “আজকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুপস্থিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমার তার জীবদ্দশায় সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। সে ক্ষেত্রে আমরা জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুসারী হিসেবে সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত কেন? সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত বলেই রাজনৈতিক গুম, খুন ও অপহরণ চলছে। আর হাসিনা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।”
এর আগেও বিএনপির নেতাদের মধ্যে পরস্পরের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন ‘সব কোর্ট এখন মুজিব কোটের পকেটে’। তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, “পাবলিকলি তার এ ধরনের বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি।”
মওদুদের বক্তব্যের জবাবে গয়েশ্বর আরেকটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “তারও (মওদুদ) এ কথা পাবলিকলি বলা ঠিক হয়নি। যদি একজন আরেকজনকে এভাবে বলেন তাহলে দলের ঐক্য কোথায় থাকল!”
বৃহস্পতিবার জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরো বক্তব্য দেন বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ।